বাসস
  ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০২

বাগেরহাটে শুঁটকি মৌসুমের শুরুতে হাজারো জেলের প্রস্তুতি

আসন্ন শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে বাগেরহাটের মোংলার উপকূলের নদ-নদীতে জড়ো হয়েছে শত শত জেলে ট্রলার। ছবি: বাসস

//আজাদ রুহুল আমিন //

বাগেরহাট, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম। আসন্ন শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে বাগেরহাটের মোংলার উপকূলের নদ-নদীতে জড়ো হয়েছে শত শত জেলে ট্রলার। বন বিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে শনিবার দিবাগত রোববার মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করবেন এসব জেলেরা। এখন মোংলায় অবস্থান নিয়ে এসব জেলেরা তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ট্রলার ভর্তি করছেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আগামিকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম। শুঁটকি মৌসুম শেষ হবে ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ মৌসুমের ৪ মাস ধরে তারা দুবলার আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শেলার চরে অবস্থান করবেন। চরগুলোতে জেলেদের থাকার জন্য নয়শ’ ঘর বাঁধার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর দোকানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৮০টি। এর মধ্যে রয়েছে মুদি, তেল, ওষুধ, সেলুন ও হোটেলসহ নানা পণ্যের দোকান। এছাড়া মাছ বেচাকেনার জন্য একশ’ টি ডিপোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, এ মৌসুমকে ঘিরে চরগুলোতে প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজনের সমাগম ঘটবে। তারা চরে থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করবেন। নির্মাণ করা হবে মাছ শুকানোর চাতাল ও ট্রলার থেকে মাছ ওঠা-নামানোর জন্য জেটি এবং ঘাট। এসব জেলেরা কোনোভাবেই সুন্দরবনের কোনো প্রজাতির গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালান, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞা মেনেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন জেলেরা। মোংলার মহাজন কালাম ব্যাপারী ও লতিফ হাওলাদার জানান, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে আমাদের মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ঝড়ে অনেক সময় ট্রলার ডুবে যায়। বৃষ্টিতে চরের মাছও পঁচে যায়। এতে অনেক ক্ষতি হয়। এই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সাথে যুদ্ধ করেই কাজ করতে হয়। 

জেলেদের মহাজন রফিকুল ইসলাম বলেন, বনের গাছপালা কাটা ও ব্যবহার নিষেধ, তাই আমরা জাল ধরার জন্য কাঁকড়া, ঘর ও চাতাল নির্মাণের বাঁশ, বেড়া-চটকি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। যাতে বনের কোনো ক্ষতি না হয়।  

জেলেদের আরেক মহাজন মোস্তফা সানা জানান, একটি পরিপূর্ণ ট্রলার নিয়ে দুবলার চরে যেতে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। তাই ধার-কর্জ করে নৌকা, জাল, বসতঘরের প্রয়োজনীয় মালামাল ও মানুষজন নিয়ে সাগরে যেতে হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো মাছ পাবেন, তাহলে টাকা উঠে আসবে। নাহলে লোকসান দিয়ে ঘরে ফিরতে হবে। অন্যদিকে, জেলে কালাম শেখ নিরাপত্তার জন্য, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি কামনা করেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, গত মৌসুমে শুঁটকি থেকে বন বিভাগের সাতকোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। 

তিনি জানান, জেলেদের নিরাপত্তায় বন বিভাগের পাশাপাশি সেখানে কোস্টগার্ড সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।