শিরোনাম
তানভীর হায়াত খান
নেত্রকোনা, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার কেন্দুয়ায় জনপ্রিয় লোকজ সঙ্গীত শিল্পী, কবি ও গীতিকার,সাধক জালাল খাঁর স্মৃতিকে আরও বর্ণিল করতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জালাল মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ মঞ্চের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, এই মঞ্চে নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে সুস্থধারার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। নেত্রকোনা যদি দেহ হয়, তবে কেন্দুয়া হলো তার মগজ। অজস্র জ্ঞানী ও গুণীর জন্ম এ উপজেলায়, যারা যুগে যুগে জাতির জন্য অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড.ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমি কেন্দুয়ায় যোগদানের পর মরহুম জালাল উদ্দিন খাঁকে নিয়ে গবেষণা করেছি। তিনি সাধক হিসেবে কোনো অংশেই লালনের চেয়ে কম ছিলেন না, বরং কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে ছাড়িয়েছেন। তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে ২০২৪ সালে কেন্দুয়ার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ‘জালাল মেলা’ আয়োজন করেছিলাম। আজ তাঁর নামে এই মঞ্চ নির্মাণের মধ্য দিয়ে সেই শ্রদ্ধা আরও গভীরভাবে প্রকাশ করা হলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে নির্মিত এ মঞ্চকে স্থানীয় সংস্কৃতিচর্চা ও লোকজ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া বলেন, এই জালাল মঞ্চ স্থাপন সাংস্কৃতিক বিকাশে মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাহী কর্মকর্তার এই উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
মঞ্চ উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ বাউল সন্ধ্যা, যেখানে সংগীত পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য বাউল শিল্পী সুনীল কর্মকার, কদ্দুস বয়াতি, বাউল সালাম সরকার ও বাউল মুকুল সরকার।
অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তাঁদের পরিবার, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কবি ও চিন্তক এনামূল হক পলাশ জানান,সংস্কৃতিতে কেন্দ্রীয় আগ্রাসনের বিপরীতে এক বটবৃক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা জালাল খাঁর নামে মঞ্চ হওয়াটা একটা দারুণ সুখবর। এই বিষয়টি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তাৎপর্যকে ভবিষ্যতে জাগিয়ে রাখবে।
মরহুম জালাল উদ্দিন খাঁ ছিলেন বাংলার এক সাধক ও লোকসংগীতের প্রাণপুরুষ।বিংশ শতাব্দীর বিশ থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত তিনি আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব ও বিরহতত্ত্বের গানে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেন।
বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালে সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৮৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি (সিংহের গাঁও) গ্রামে জন্ম নেন তিনি। তাঁর পিতার নাম সদরুদ্দীন খাঁ।
তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন। জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় ‘জালাল গীতিকা’ নামের চার খণ্ডে ৬৩০টি গান, মৃত্যুর পর পঞ্চম খণ্ডে সংযোজিত হয় আরও ৭২টি গান। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’-এ অন্তর্ভুক্ত হয় মোট ৭০২টি গান।
এছাড়া তিনি “বিশ্বরহস্য” নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থও রচনা করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই (১৬ শ্রাবণ ১৩৭৯) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্ত্রী শামছুন্নাহার বেগম, দুই পুত্র ও তিন কন্যা রেখে যান তিনি। তাঁর কবর নিজ গ্রাম আসদহাটিতেই অবস্থিত, যা বর্তমানে লোকসংগীত প্রেমীদের কাছে পরম শ্রদ্ধা ও মিলনস্থল।