বাসস
  ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৮
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৫

প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ে টিকা পাবে : স্বাস্থ্য অধিদফতর

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু জাফর আজ ধানমন্ডির ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ উদ্বোধন করেন। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী নিজ বিদ্যালয়ে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা পাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু জাফর।

আজ রোবিবার ধানমন্ডির ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

মহাপরিচালক বলেন, আজ থেকে সারাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি সব শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ টিকার আওতায় থাকবে।

কোনো শিশুই টিকার বাইরে থাকবে না। সারাদেশে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে মাসব্যাপী টিকা দেওয়া হবে।

আবু জাফর বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) ১৯৭৯ সাল থেকে শিশু, কিশোরী এবং সন্তান ধারণক্ষম নারীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য বিভিন্ন সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমে এসেছে।

তিনি জানান, প্রতি বছর প্রায় ৪২ লাখ শিশুকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

ডা. জাফর বলেন, বাংলাদেশে টিকায় প্রতিরোধযোগ্য মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে টাইফয়েড অন্যতম। ‘সেল মোনেলা টাইফি’ নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবে টাইফয়েড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজারই ১৫ বছরের নিচে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ আলীকরন রেজা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. খায়ের আহমেদ চৌধুরী এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. সুলতান আহমেদ। 

মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। প্রচলিত অনেক অ্যান্টিবায়োটিক এখন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। তবে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ কমিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, আজ থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই ক্যাম্পেইনের আওতায় বিনামূল্যে ১ ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বহির্ভূত শিশুদের কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।

মহাপরিচালক বলেন, টিসিভি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরীক্ষিত ও অনুমোদিত নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা। এটি প্রোটিন ও শর্করা উপাদানে তৈরি, ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।

এটি কোনো পরীক্ষামূলক টিকা নয়, বাংলাদেশ সরকার কেবল পরীক্ষিত ও নিরাপদ টিকাই ব্যবহার করে।

তিনি জানান, পাকিস্তান ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে এই টিকা সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই টিকা শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি হ্রাস করে। টিকা নেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া—যেমন ইনজেকশনের স্থানে লালচে হওয়া, হালকা ব্যথা, মৃদু জ্বর বা ক্লান্তি—দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিকভাবেই সেরে যায়।

ডা. জাফর বলেন, এই টিকায় শরীয়তবিরোধি কোনো উপাদান নেই। এটি সৌদি হালাল সেন্টার কর্তৃক হালাল সনদপ্রাপ্ত। টিকা নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে Ôvaxepi.gov.bdÕ ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। যাদের জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেওয়া হবে। নিবন্ধন কার্যক্রম ক্যাম্পেইনের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে।

তিনি বলেন, ‘টিকার কারণেই বাংলাদেশ আজ পোলিওমুক্ত হয়েছে, হেপাটাইটিস-বি, হাম, রুবেলা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, মা ও শিশুর ধনুষ্টংকার নির্মূল হয়েছে। ভবিষ্যতে টাইফয়েডও টিকা দিয়েই নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল করা সম্ভব হবে।’

তিনি সবাইকে এ টিকাদান কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।