শিরোনাম
এস এম জাহিদ হোসেন
খুলনা, ১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আঙ্গারদহ গ্রামের ৪০ বছর বয়সি আকলিমা বেগম শিম চাষের মাধ্যমে তার ভাগ্য বদলে দিয়েছেন, যা গোটা অঞ্চলের গ্রামীণ নারীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
বাক্প্রতিবন্ধী স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে আকলিমা ২০১৬ সালে লিজ নেওয়া জমিতে শিম চাষ শুরু করেন। তিনি বাসস’কে বলেছেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে শিম আবাদে তার তিন লাখ টাকা খরচ হয়। এই শিম বিক্রি করে খরচ তুলে তিনি দুই লাখ টাকা লাভ করেন।
২০১৬ সাল থেকে এভাবে তিনি শুধু শিম চাষের আয় থেকে পাকা ঘর বানিয়েছেন। এছাড়া আয় থেকে তিনি গৃহস্থালি আসবাবপত্র কিনেছেন এবং একটি গবাদিপশুর খামার শুরু করেছেন।
চিংড়ি চাষের জন্য পরিচিত ডুমুরিয়া উপজেলা এখন শিম চাষের মাধ্যমে একটি প্রধান সবজি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শিম চাষ এখন ১৭০ কোটি টাকার একটি শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ২২৬টি গ্রামের গ্রামীণ জীবিকা নির্বাহ করেছে এবং কৃষিতে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত বছর ডুমুরিয়ায় দুই মৌসুমে প্রায় ৮শ’ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন বারি-৩, বিস্কুট ও রুপসী বাংলা জাত থেকে ৭ হাজার ৬শ’ টন শিম উৎপাদিত হয়, যা ১০৭ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর শীতকালে উৎপাদিত হয় ১০ হাজার ৫শ’ টন শিম, যা ৬৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ওই অঞ্চলে মোট ২ হাজার ২৮০ কৃষক শিম চাষে জড়িত। এর মধ্যে ৯১০ জন নারী সরাসরি বীজ বপন, যত্ন নেওয়া এবং ফসল তোলা কাজে যুক্ত রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বাসস’কে বলেছেন, শিম চাষ নারীর ক্ষমতায়ন এবং ডুমুরিয়ায় কৃষিতে বৈচিত্র্য এনেছে।
শিম চাষ একটি গতিশীল বাণিজ্যিক ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ও আশপাশের গ্রামীণ রাস্তাগুলোর ধারে এখন অন্তত ২৩টি বাজারে শিম বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে ছয়টি পাইকারি বাজার রয়েছে।
কৃষক, ব্যবসায়ী, পরিবহনকর্মী ও শ্রমিকসহ ৭ হাজারের বেশি মানুষ সরাসরি কেনাবেচার শৃঙ্খলের সাথে জড়িত।
শোভনা গ্রামের প্রবীণ কৃষক পরিমল মণ্ডল বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলে কাপালি সম্প্রদায় সবজি চাষ করত। এখন, আবারও শিম চাষ ডুমুরিয়ার দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনিরুল ইসলাম বলেছেন, শিম চাষ ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
তিনি বাসস’কে বলেছেন, আকলিমার মতো নারীদের জন্য এটি মর্যাদা ও আর্থিক স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে।
এটি ডুমুরিয়ায় চিংড়ির ওপর নির্ভরতা হ্রাস এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তুলছে।
খুলনা কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ১৩৫ টন শিম উৎপাদিত হয়েছে। এই অঞ্চলের বর্তমান মৌসুমে ফসলের ২৮ শতাংশ ইতোমধ্যেই তোলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, অঞ্চলটির শিম উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি শুধু ডুমুরিয়া থেকেই আসে। একসময় চিংড়ির জন্য পরিচিত ডুমুরিয়া এখন নারীদের শিম চাষের মাধ্যমে সবজি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।