শিরোনাম
আবদুস সালাম আজাদ জুয়েল
চাঁদপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): আজ মহাসপ্তমী। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে পঞ্চমী তিথির মাধ্যমে এই উৎসবের যাত্রা শুরু হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের হাওয়া লেগেছে প্রকৃতিতেও। নীল আকাশে শুভ্র তুলোর মতো ভাসমান মেঘ আর শরতের হিমেল হাওয়ায় শারদীয় উৎসবের বার্তা। মানুষের হৃদয়েও লেগেছে তারই হাওয়া। মন্দিরে মন্দিরে কাঁসর ঘণ্টা আর শঙ্খধ্বনি উৎসব মুখর করে তুলেছে চারপাশ।
আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা। এখন সকাল সন্ধ্যা প্রতিটি মণ্ডপে চলছে পূজা অর্চনা। পূজারিদের কণ্ঠে বাজছে ভক্তির সুর। প্রতিমা শিল্পীদের দক্ষ হাতে মায়ের প্রতিমায় ফুটে উঠেছে সৃজনশৈলী ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন।
জেলার ৮টি উপজেলায় ২২৪টি মণ্ডপে শুরু হয়েছে শারদীয় উৎসব। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪২টি, হাইমচর উপজেলায় ৬টি, মতলব উত্তর উপজেলায় ৩৪টি, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩৪টি, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ২৯টি, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২২টি, শাহারাস্তি উপজেলায় ১৯টি ও কচুয়া উপজেলায় ৩৮টি।
জেলার প্রধান মন্দির শ্রী শ্রী কালিবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত তপন চক্রবর্তী বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘এবছর দেবী দুর্গার আগমন গজে চড়ে আর গমন হবে দোলায় চড়ে। মানে দেবী দুর্গা হাতিতে চড়ে মর্তে আগমন করে পালকিতে চড়ে স্বর্গে গমন করবেন। ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার মহালয়া এর মাধ্যমে শারদীয় উৎসব এর শুরু হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯.১৮ মিনিটে পঞ্চমী তিথি এবং ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্গাষষ্ঠী। ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন মায়ের বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে পূজা শেষ হবে।’
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ভক্তদের মনে এখন উৎসবের আমেজ। সবার অংশগ্রহণে এক বৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এই উৎসব। এই উৎসব যাতে নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মণ্ডপগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা।
মণ্ডপ ঘুরে দেখতে দেখতে কথা হয় গৌতম বর্ধনের সাথে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের প্রধান উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে আমাদের ব্যাপক আয়োজন থাকে। প্রতিমা ও সাজ সজ্জার কাজ দেখতে এখন একাই ঘুরে দেখছি। মূল উৎসব শুরু হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াবো। আশা করছি প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আনন্দমুখর পরিবেশেই উৎসব সম্পন্ন হবে।
ফরিদপুর জেলার প্রতিমাশিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, অনেক বছর ধরে চাঁদপুর জেলায় কাজ করি। দুর্গাপূজা আসলে আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে দিন-রাত এক করে আমরা কাজ করেছি। তবে এই পেশায় কদর কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন আর পেশায় থাকে না। তাই সারাবছর কাজ না থাকলেও পূজার সময় একসাথে অনেকগুলো মণ্ডপের দায়িত্ব নিতে হয়।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ বলেন, এ বছর জেলায় মোট ২২৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তায় মণ্ডপে মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও আনসার সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। রাজনৈতিক নেতারাও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। পাশাপাশি পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে।
র্যাব-১১ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান বাসসকে বলেন, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। পূজা চলাকালীন কোনো ধরনের নাশকতা, মাদক বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। স্থানীয় প্রশাসন, আয়োজক কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এছাড়াও চাঁদপুরের জন্য দুইটি টহল টিম কাজ করছে।
জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্বে যুক্ত আছে। এর বাইরে আমাদের সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। আমরা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।