বাসস
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০০

শিগগিরই ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হবে : মাহফুজ আলম

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে শিগগিরই ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আইনের ১৮টি খসড়া সংস্করণ পেয়েছি এবং সেগুলো মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করেছি।’

আজ রোববার নগরীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং অভিযোগ: রাজনৈতিক ও নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সংলাপ অধিবেশনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা।

গণমাধ্যম সম্পর্কিত সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই সংলাপের আয়োজন করে।

ডেইলি স্টারের পরামর্শক সম্পাদক এবং মিডিয়া সংস্কার কমিশনের প্রাক্তন প্রধান কামাল আহমেদও সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মিডিয়া সংস্কারের অংশ হিসেবে, মাহফুজ আলম বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে একীভূত করার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, কর্মীদের সমন্বয় এবং স্টেকহোল্ডারদের প্রভাবের কারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধির ফলে মিডিয়া হাউস মালিকরা উপকৃত হলেও, সাংবাদিকদের জন্য প্রকৃত সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ‘সাংবাদিকরা আসলে কী পাচ্ছেন? মালিকদের কাছে এর কোনও উত্তর নেই,’ তিনি বলেন।

মাহফুজ আলম বলেন, তার মেয়াদে কোনও মিডিয়া হাউস বন্ধ হয়নি, তবে ৭২ থেকে ৭৫ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং তিনি এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছেন।

অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এস. এম. শামীম রেজা; বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল; জি-৯ এর সাধারণ সম্পাদক ড. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত; বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব এবং মিডিয়া ও প্রচার দলের প্রধান এডভোকেট আহসানুল মাহবুব জুবায়ের; বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল¬াহ কাফি রতন; বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান; গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী; এবি পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা মিলি; এনসিপির প্রধান যুগ্ম-সংগঠক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়কারী জুবায়েরুল হাসান আরিফ; গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান; সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হাসান; বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. আব্দুল¬াহ; ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কাজী জেসিন এবং দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক জাইমা ইসলাম।

অধিবেশনটি পরিচালনা করেন সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান।

সংস্কারের উপর জোর দিয়ে জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেন, সংস্কার সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হলেও ২০০৭-০৮ সালের ‘ওয়ান-ইলেভেন’ সময়কালে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি কখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেন যে সংস্কারের বর্ণনাগুলো প্রায়শই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, পৃষ্ঠা উল্টে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য খুব কম প্রচেষ্টা করা হয়।

কামাল আহমেদ জনমত সংগ্রহ এবং ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন ২০২৫’ এবং ‘মিডিয়া কমিশন আইন’ এর খসড়া একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার সুপারিশ করেন। 

ছয় মাস আগে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরেও, তিনি সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

ড. এস এম শামীম রেজা বলেন, গণমাধ্যমের উপর জনসাধারণের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে, তবুও এই বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গবেষণার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মিডিয়া হাউসগুলো গবেষণা পরিচালনায় অনীহা দেখায় এবং তাদের ঢাকা-কেন্দ্রিক কার্যক্রমের কারণে, আঞ্চলিক পর্যায়ে তদারকির অভাব রয়েছে।’

তিনি ভালো সাংবাদিকতার মান মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা, সাংবিধানিক সংস্কারের মতো গণমাধ্যম সংস্কারের ওপর রাজনৈতিক দলের আলোচনার অনুপস্থিতি এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও নীতির ঐতিহ্য গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

নাজমুল হক প্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ মতামত প্রকাশ করলে যে ধরণের আক্রমণ হয় তা বন্ধ করার বিষয়ে সকলেরই গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা উচিত।

এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য পেশাদার গোষ্ঠীর মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের উপস্থিতি তুলে ধরেন।

আবদুল্লাহ আল কাফি রতন উলে¬খ করেন যে আজ বেশিরভাগ মিডিয়া হাউস কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। এই কর্পোরেট মালিকদের বাণিজ্যিক চাপের কারণে সাংবাদিকদের স্বাধীনতার সাথে আপস করা হচ্ছে।

ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল গণমাধ্যমের ভূমিকা, নীতি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি পেশার মতো সাংবাদিকতারও নিজস্ব নীতিশাস্ত্র এবং ঝুঁকি রয়েছে।