শিরোনাম
খুলনা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দুর্গাপূজার আর মাত্র ছয় দিন বাকি। খুলনায় মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা রঙ ও সাজসজ্জা করতে পুরোদমে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
এই বছর খুলনায় মোট ৯৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। এর মধ্যে শহরে ১২০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে।
দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক উৎসব ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে এবং ২ অক্টোবর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।
পূজার আগে শপিংমলগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। উৎসবের কেনাকাটা করতে ভিড় করছে মানুষ।
শহরের বেশ কয়েকটি মন্দির পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। কারিগররা এখন প্রতিমা রঙ করা এবং শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ করছেন।
শহরের ধর্মশোভা মন্দিরের একজন প্রতিমা নির্মাতা চন্দ্রশেখর পাল জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, এ বছর আমরা প্রতিমা তৈরি করতে প্রচুর অর্ডার পেয়েছি। আমরা ১০-১৫ দিন আগে মাটির কাজ শুরু করেছিলাম এবং এখন রঙ করার শেষ পর্যায়ে আছি।
চন্দ্রশেখর আরো বলেন, প্রতিমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল-মাটি, দড়ি, খড়, বাঁশ ও পাটের খরচ বেড়েছে।
তিনি বলেন, একটি বড় প্রতিমা তৈরি করতে ১২-১৬ দিনের জন্য পাঁচ থেকে আটজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর ছোট প্রতিমা তৈরি করতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিমা তৈরির পেশায় জড়িত আছেন চন্দ্রশেখর পাল। গত দুই মাসে ২৮টি প্রতিমা তৈরি করেছেন এবং আরও সাতটি প্রতিমার কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি প্রতিমার জন্য প্রায় ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
তিনি বলেন, খুলনার প্রায় একশ পাল গ্রুপ এখন মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত এবং তারা ইতোমধ্যেই ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে।
উৎসবের দিনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং পুলিশসহ যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে আনসার সদস্যরা উৎসবের সময় প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবেন।
খুলনা পুলিশ জানায়, মণ্ডপগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব বা ভুল তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেএমপি এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সার্বক্ষণিকভাবে খোলা থাকবে।
কেএমপির সহকারী উপ-কমিশনার (মিডিয়া) খন্দকার হোসেন আহমেদ বলেন, দুর্গাপূজার আগে কেএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দুর্গাপূজা নিশ্চিত করতে কেএমপি পেশাদারিত্বের সঙ্গে সহযোগিতা করবে এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজার আগে ও পরে প্রতিমা তৈরির সময় এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ অথবা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে অবহিত করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
এ বছর সরকার খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় ৯৩৭টি পূজা মণ্ডপের জন্য ৪৬৮.৫ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কয়রায় ৭৬টি পূজা মণ্ডপের জন্য ৩৮ হাজার টন, বটিয়াঘাটায় ১০৬টি মণ্ডপের জন্য ৫৩ হাজার টন, তেরখাদায় ৯৮টি মণ্ডপের জন্য ৪৯ হাজার টন, দিঘলিয়ায় ৬১টি মণ্ডপের জন্য ৩০ হাজার ৫০০ টন, রূপসায় ৭৫টি মণ্ডপের জন্য ৩৭ হাজার ৫০০ টন, ফুলতলায় ৩৪টি মণ্ডপের জন্য ১৭ হাজার টন, ডুমুরিয়ায় ২১৫টি মণ্ডপের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টন, কয়রায় ৫৪টি মণ্ডপের জন্য ২৭ হাজার টন, পাইকগাছায় ১৪২টি মণ্ডপের জন্য ৭১ হাজার টন এবং শহরের ৭৬টি মণ্ডপের জন্য ৩৮ হাজার টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।