বাসস
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৬

পটুয়াখালীতে ১৮৪টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা, শেষ সময়ে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

পূজা মণ্ডপগুলোতে রং-তুলি হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ছবি : বাসস

।।এনামুল হক এনা।।

পটুয়াখালী, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১৮৪ টি মণ্ডপে জেলাব্যাপী চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। পূজা মণ্ডপগুলোতে রং-তুলি হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। জেলার পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দুমকি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, এবং রাঙ্গাবালিতে মোট ১৮৪ টি মণ্ডপে চলছে শেষ সময়ের কর্মযজ্ঞ।

জেলা সদরের পূজা মন্ডপগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমার অবয়বের ওপর শেষবারের মতো হাত লাগাচ্ছেন। আবার কোথাও শিল্পীরা প্রতিমায় রং তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন। প্রতিমা শিল্পীদের হাতের  ছোঁয়ায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে দুর্গা প্রতিমাগুলো। এসময় মন্দির ও পূজা মণ্ডপগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভক্ত পূজারিরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন সবকিছু। সাথে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি টিভিতে মনিটর হচ্ছে সকল ধরনের কাজকর্ম।

বাউফল পৌর শহরের কালিবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দিরের পূজা মন্ডপে প্রতিমা শিল্পী উত্তম কুমার পালের (৪৫) সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এখানে তারা দু’জন কাজ করছেন। এর বাইরে সারা জেলায় ১৫ থেকে ২০ দলে ৮০ থেকে ১০০ জন প্রতিমা শিল্পী এ কাজে রয়েছেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিল্পীরা প্রতিমার কাজ শেষ করে মন্দির কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেবেন।

এ বিষয়ে বাউফল সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী বাড়ির পুরোহিত বিপুল চক্রবর্তী (৬০) বলেন, এবছর দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে চড়ে আর গমন হবে দোলায় চড়ে। অর্থাৎ দেবী দুর্গা হাতিতে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন এবং পালকিতে চড়ে স্বর্গে গমন করবেন।

তিনি আরও জানান, আজ রোববার মহালয়া’র মাধ্যমে শারদীয় উৎসব শুরু হচ্ছে। আর ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা ১৮ মিনিটে পঞ্চমী দিয়ে শুরু হয়ে ১ অক্টোবর মহানবমী ও ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে এ দুর্গোৎসব শেষ হবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সবধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবছর দেশের শান্তি ও ভক্ত পূজারীদের মঙ্গল কামনা করে মায়ের আশীর্বাদে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হবে।

পটুয়াখালী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল বরণ দাস বাসসকে বলেন, জেলায় এবার ১৮৮টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৮৪টি হচ্ছে সরকারিভাবে স্বীকৃত আর ৪টি হচ্ছে ঘর পূজো। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সব স্তরের সাথে বৈঠক করেছি। এমনকি সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথেও বসেছি আমরা।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা থাকবে। সিসি ক্যামেরা কেউ ভাড়ায় বসাবেন, কেউ নিজস্বভাবে বসাবেন, আবার ইউএনও অফিস থেকেও কোনো কোনো মন্দিরে বসানো হচ্ছে। আমাদের ভলান্টিয়ারের আইডিকার্ড ছবি সম্বলিত থাকবে। রাত ২ থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়টাকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করছি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী বাসসকে বলেন, পূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা মিটিং শেষ হয়েছে। যত সরকারি বরাদ্দ এসেছে আমরা তা প্রতিটি উপজেলায় দিয়েছি। ১৮৪টি মণ্ডপে আমরা ৫০০ কেজি করে চাল দিয়েছি। এর বাইরেও যদি কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তার ব্যবস্থা করবো।
তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতি মণ্ডপে আমরা সেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছি। হিন্দু ধর্মের বাইরে অন্যধর্মের নেতারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। হিন্দু ধর্মের নেতারাও বলেছেন, আজানের ৫ মিনিট আগে থেকে নামাজের ১০ মিনিট পর্যন্ত ওনাদের মাইক বন্ধ রাখবেন।

পটুয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ এ বিষয়ে বাসসকে বলেন, পূজা উপলক্ষে তিন স্তরে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমাদের মোবাইল টিম থাকবে। আমাদের সাদা টিম থাকবে। আর মাঠে যেহেতু সেনাবাহিনী, র‌্যাব, এনএসআই আছে তাই তাদের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আনসার ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকবে। কোনো মণ্ডপে থাকবে ৬ জন। কোনো মণ্ডপে থাকবে ৮ জন। আশা করি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।