শিরোনাম
কুমিল্লা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কুমিল্লা নগরীর কালীয়াজুড়ি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তার মাকে হত্যার মূল আসামি কবিরাজ মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার রাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ।
গ্রেপ্তার মোবারক হোসেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে।
পুলিশ জানায়, নিহত তাহমিনা বেগম ফাতেমা (৫২) ও তার সন্তানরা দীর্ঘদিন ধরে সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালীয়াজুড়ি এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। বড় ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৪) ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০) রাতে বাসায় ফেরার পর মা ও বোন সুমাইয়া আফরিন রিনথিকে (২৩) মৃত অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেন।
রিনথি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সোমবার ভোরে ঘটনার পর নিহত তাহমিনার ছেলে তাজুল ইসলাম রাতেই কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোবারক হোসেন জানায়, সুমাইয়া কথিত ‘জ্বীনের প্রভাব’-এ ভুগছিলেন বলে মা তাহমিনা বেগম তাকে স্থানীয় এক মাদ্রাসার হুজুরের কাছে ঝাড়ফুঁক করাতে নিয়ে যেতেন। ওই সূত্রেই মোবারকের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। পরে মোবারক একাধিকবার ভাড়া বাসায় গিয়ে ঝাড়ফুঁক করত।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোবারক একটি কমলা রঙের শপিং ব্যাগ ও একটি কালো ব্যাগ নিয়ে তাদের বাসায় প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর বের হলেও পুনরায় ঢুকে সুমাইয়ার কক্ষে গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় মা তাহমিনা বেগম ঘটনাটি দেখে ফেললে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে সুমাইয়াকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে মোবারক। হত্যার পর বাসায় থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ লুট করে পালিয়ে যায়।
হত্যার পর থেকেই আসামি মোবারক আত্মগোপনে থেকে অবস্থান পরিবর্তন করছিল। তবে কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিবি টিম প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় পালানোর প্রস্তুতিকালে শহরের বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা জানান, মোবারকের কাছে থেকে নিহতদের চারটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও চার্জার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া যে কমলা রঙের ব্যাগ নিয়ে সে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেছিল সেটিও তার ভাড়া বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে।
নিহত সুমাইয়া আফরিনের বড় ভাই এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মায়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না, কিন্তু ছোট বোনকে এত নৃশংসভাবে হারানো আমাদের জন্য আরও ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। আমরা চাই খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
পুলিশ সুপার নজির আহম্মেদ বলেন, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, র্যাব ও পিবিআই একযোগে তদন্ত শুরু করে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের। ডিবি পুলিশের তৎপরতায় মূল আসামিকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এখন মামলাটিকে আদালতে প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হবে।