শিরোনাম
বাবুল আখতার রানা
নওগাঁ, ১৮ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : দুলাল হোসেন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ২০০২ সালে বিয়ে করেন। পাঁচ মাসের মাথায় পারিবারিক কলোহের জেরে স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর শশুরের করা হত্যা মামলায় দীর্ঘ ২৩ বছর সাজাভোগ শেষ করেন গত ২ জুলাই। ওই মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন তিনি। এখন তার সামনে নতুন জীবন।
আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল তাকে একটি মুদি দোকান উপহার দিয়েছেন তার জীবন বদলে। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলায় এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় ২ বছরের সাজা মওকুফ হয়েছে তার। একই কারণে মুক্তির পর নিজ গ্রামে ফিরে নতুন মুদি দোকান পেলেন দুলাল।
দুলালকে পুনর্বাসন করতে ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের উদ্যোগে মুদি দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মূলধন হিসেবে নগদ টাকা ও বসবাসের জন্য একটি বাড়িও দেওয়া হবে তাকে।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। পরে শ্বশুরের দেওয়া হত্যা মামলায় ২০০২ সালে জেল হয় তার। ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন জেল হয় তার। এরপর ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের বিপরীতে সিআইডি হিসেবে কাজ করেন। বন্দীরা গোপনে কি পরিকল্পনা করছে সেই খেয়ালও করতেন তিনি। পরে নওগাঁ জেলা কারাগারে তাকে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, মামলা চলাকালে তাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উকিল খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে এক সময় বিচারের আশা ছেড়ে দেন স্বজনরা।
একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসত না। মাঝে মধ্যে মা আয়েশা কিছু টাকা দিয়ে আসলেও তিনি তা খরচ করতেন না। এসব কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পরেন দুলাল।
তবে দায়িত্বশীল আচরণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলার কারণে কারাগারে সুনাম ছিল দুলালের। কারাগারে বন্দীদের দেখাশুনা করতেন তিনি। এভাবেই কারাগারে ২৩ বছর অতিবাহিত হয় তার।
জেল থেকে মুক্ত হয়ে আগামী জীবনে কি করে চলবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পরেন দুলাল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করবেন বলে ঠিক করেন। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন জেলা প্রশাসকের কাছে।
স্থানীয়রা বলেন, দুলাল তার জীবনের ২৩ বছর জেল খানাতে ব্যয় করেছে। তার ভিটেমাটি কিছুই নেই। সে কোথায় থাকবে। যদি তাকে বসবাসের জন্য ডিসি সাহেব একটি ঘর দেয়, তাহলে দুলালের খুব উপকার হবে।
দুলালের মা আয়েশা বলেন, আমি ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমার ছেলেকে একটি বাড়ি তৈরি করে দিলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, সমাজে প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন থাকে। দুলালের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝড়ে গেছে। দুলাল আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।