শিরোনাম
মোশতাক আহমদ
ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে অভিযুক্ত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কোন অবহেলা সহ্য করা হবে না।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীরা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন। আমরা দেখলাম এর মধ্যে অনেকেই পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে কৃতকার্য হয়েছেন তথা পাস করেছেন। এটা খুবই ভালো কথা যে ছাত্র-ছাত্রীরা ফেল থেকে পাশ করেছেন। তবে আমাদের কথা হল পরীক্ষার খাতা এমনভাবে দেখতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থীও তার সঠিক মূল্যায়ন করা থেকে বঞ্চিত না হয়।
ডক্টর সি আর আবরার বলেন, পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কোন অবহেলা সহ্য করা হবে না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে এ খাতে শিক্ষকদেরকে যথোপযুক্ত সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। তাই শিক্ষকদেরকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করতে হয়। এ বিষয়ে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।
উপদেষ্টা বলেন, এবছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর ৩ লাখ ২৭ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষার খাতা পুন:মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেছেন।
আবেদনকারীদের মধ্যে পরীক্ষায় ফেল থেকে পাস করেছেন ২ হাজার ৯৬ জন। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৯৫১ জন। ফেল করা থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ১৩৯ জন। তার মানে দাঁড়ালো পুনঃনিরীক্ষণে আবেদনকারীদের তুলনায় রেজাল্ট চেঞ্জ হয়েছে ৩ দশমিক ০৩ পার্সেন্ট।
তিনি বলেন, পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। এর ফলাফলে পার্সেন্টেজ যাই হোক না কেন যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, খুব শিগগিরই সারা দেশের শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের ডেকে বৈঠক করে এ বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী দিকনির্দেশনা নেয়া হবে।
সি আর আবরার বলেন, এসএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদেরকেই আইনের আওতা নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন- সম্ভবত তাদেরকে আর বোর্ডের পরীক্ষার খাতা দেওয়া হবে না। অভিযুক্তদেরকে পরীক্ষা থেকে দূরে রাখা হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, পরীক্ষার খাতা বিতরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ড গুলোকেও আরো সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে একটি মানদণ্ড ঠিক করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়নের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত নিয়ম-কানুন জারি আছে। তারপরও দেখা যায় অনেক শিক্ষক নিজে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দিয়ে অথবা সন্তানদেরকে দিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন, এমন অভিযোগও অনেক সময় পাওয়া যায়। তাই আমি বলবো এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সম্পূর্ণ ফেল করা থেকে যারা পাশ করলেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারের উপরে। এদের প্রতিটা দিন কেটেছে কত কষ্টে সেটা আমি একজন শিক্ষক হিসেবে অনুমান করতে পারি। তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
ডক্টর সি আর আবরার বলেন, অতীতের সরকারের মত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এখন আর রেজাল্ট দেওয়া হবে না, আগেই বলা হয়েছে। তেমনি ভাবে কেউ যদি ভালো লিখে পরীক্ষার খাতায়, তাহলে সেও যাতে পাশ করে সেটাও নির্দেশনা আছে। অর্থাৎ কারো ক্ষেত্রেই পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন সহ্য করা হবে না। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীর যতটুকুই লেখেছে ততটুকুই যেন সঠিক নাম্বার সে পায়, সেটা শিক্ষকদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।