বাসস
  ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১৪

যুব উদ্যোক্তা তৃষ্ণা গড়ে তুলতে চান নারীদের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান

তৃষ্ণা গড়ে তুলতে চান নারীদের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। ছবি : বাসস

সুনামগঞ্জ, ১৪  আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : কবির ভাষায়, ‘নারী তুমি অবনীর বুকে যেন একটি গোলাপ ফুল’ ভোর প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা করার পর পরিবারের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করে নিজের জন্য টিফিন ভরে নিয়ে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায় যে নারী, সে হয় মা, বোন অথবা অর্ধাঙ্গিনী।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের আব্দুল মনাফের মেয়ে তৃষ্ণা আক্তার রুশনা (৩৬)। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ শহরের নবীনগরে স্বামী এস এম কামরুল হাসান মজনুসহ তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন এবং সেখানেই নিজের পোশাক ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তৃষ্ণার জীবনের শুরুটাই ছিল চরম কষ্টের। কিন্তু তিনি আত্নবিশ্বাসী ছিলেন। জীবন বদলাতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতেন। 

তৃষ্ণার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাইয়ের অসুস্থতা ও পারিবারিক জটিলতা তাকে খুব অল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছে। পড়াশোনা করতে পারেননি নিয়মিত। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি। সময়ের সাথে সাথে সমাজের সকল বাধাঁ ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে গেছেন কেবল আত্মবিশ্বাসের জোরে।

তিনি জানান, আমার  শুরুটা একেবারে শূন্য থেকে। ২০০৬ সালে সিলেট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে পোশাক তৈরির একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হন। প্রশিক্ষণ  শেষ করে ২০০৮ সালে নবীনগরে একটি সেলাই মেশিন নিয়ে নিজের ঘরে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। প্রতিদিনের আয় দিয়েই তিনি সংসার চালাতেন। কখনো কখনো অনাহারে-অর্ধাহারেও থাকতে হতো।

বর্তমানে রুশনার রয়েছে ৭টি সেলাই মেশিন এবং একটি প্রস্তুত পোষাকের নিজস্ব শোরুম। তার অধীনে ১১ জন নারী কাজ করেন, যারা অধিকাংশই তার মতোই ছিলেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া। তাদেরকে রুশনা নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করে তুলেছেন।

২০১৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে জেলায় সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান। এরপর ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুট) থেকে “উদ্যোক্তা পুরস্কার” এবং ২০২৪ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে “সফল নারী” পুরস্কার পান। 


রুশনা নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একটি নারী উন্নয়ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি দরিদ্র ও অবহেলিত নারীদের বিনামূল্যে সেলাই, নকশিকাঁথা তৈরি, মুদি দোকান পরিচালনাসহ বিভিন্ন রকমের হস্তশিল্প ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। এ পর্যন্ত ৬০০ নারী তার প্রশিক্ষণে উপকৃত হয়েছেন।

রুশনা আরো বলেন, যারা আমাকে অবহেলা করতো, তারাই এখন সম্মানের  চোখে দেখে। আমি প্রমাণ করেছি, নারীরাও পারে, শুধু সাহস ও সুযোগের দরকার। তিনি এখন নিজ এলাকার নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে চান। সুনামগঞ্জ শহরে নারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

পার্শ^বর্তী গ্রামের বাসিন্দা কুদরত পাশা জানান, জীবনযুদ্ধে হেরে না গিয়ে নিজেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের তৃষ্ণা আক্তার রুশনা। যিনি এক সময় পরিবারের বোঝা ছিলেন। 

তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, প্রশিক্ষক ও নারীদের জন্য প্রেরণার।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আইনুল ইসলাম ভুইয়াঁ বলেন, তৃষ্ণা আক্তার রুশনা আজ শুধু একজন নারী উদ্যোক্তা নন, বরং তিনি সুনামগঞ্জের নারীদের জন্য প্রেরণা হয়ে কাজ করছেন। সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে যে কোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। তিনি তা করে দেখিয়েছেন।