বাসস
  ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৫

নাটোরে ব্লাক রাইসের অভিষেক

নাটোর, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ (বাসস) : উদ্ভাবন ও বৈচিত্রকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের শস্য ভান্ডার খ্যাত নাটোরের কৃষি। এবার আমন মৌসুমে অভিষেক হয়েছে ঔষুধি গুণে সমৃদ্ধ ব্লাক রাইস। অর্গানিক কৃষি উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল এ ধান চাষ করে সফল হয়েছেন।
সম্প্রতি নাটোর সদর উপজেলার গাজীপুর বিল এলাকায়  মোস্তাফিজুর রহমান টুটুলের অর্গানিক পল্লী এগ্রো ফার্মস এন্ড নার্সারীর পক্ষ থেকে নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ মাহমুদুল ফারুক এবং বিশেষ অতিথি নাটোর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম।
ইন্দোনেশিয়ায় উৎপত্তি হয়ে প্রাচীনকালে ব্লাক রাইস চীনে চাষ করা হতো। তবে অধিক ঔষধি গুণের কারণে  রাজপরিবারেই এ ধানের চাল ব্যবহারের রেওয়াজ ছিল। প্রজাদের জন্যে নিষিদ্ধ থাকার কারণে এ ধানকে বলা হয় ‘নিষিদ্ধ ধান’। চীনের পরে এ ধান জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া হয়ে বাংলাদেশে আসে। দেশের পার্বত্য এলাকায় এ চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল।
অর্গানিক পল্লীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল জানান, সাধারণ ধানের মতই এর চাষবাদ। ময়মনসিংহ থেকে এক কেজি বীজ সংগ্রহ করে এক বিঘাতে আবাদ করতে মোট খরচ হয়েছে সাড়ে বারো হাজার টাকা। এ ধান গাছের উচ্চতা প্রায় সাড়ে চার ফুট। এ ধানের চাল কালো! সাধারণ ধান বা চালের চেয়ে ব্লাক রাইসের দাম ও চাহিদা অনেক বেশী।
এ চালে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ চাল ত্বক পরিষ্কারক এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গমণে সহায়ক। ব্লাক রাইস ডায়াবেটিস, ¯œায়ু ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। কিডনী, লিভার ও হৃদযন্ত্রকে কর্মক্ষম রাখে। ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এ ধানের ভাত। অ্যামিনো এসিড, জিংক, কপার ও ফাইবারসহ ১১টি খাদ্য উপাদানে ভরপুর এ ধান।
জমিতে ধান কাটার পরে প্রায় ষোল মণ ধান পাওয়া গেলেও আর্দ্রতা শুকানো ও চিটা অপসারণ করার পরে প্রায় ১০ মণ ধান পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল। এর পুরোটাই বীজ করতে চান তিনি। ইতোমধ্যে নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের মাঝে বীজ হিসেবে সরবরাহ করার জন্যে এক মণ ধান নিয়েছে। প্রতি কেজি ধানের দাম পাওয়া গেছে সাড়ে তিনশ’ টাকা। টুটুল আশা করছেন, সমুদয় ধানই বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্যে কৃষকরা তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন। শুধু আমন মৌসুমেই নয় এ ধান বোরো মৌসুমেও চাষ করা যায় বলে জানান তিনি।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, নাটোরে এবারই ব্লাক রাইসের অভিষেক হলো। উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল এর সাহসী পদক্ষেপের কারণে তাকে অনুসরণ করে অন্যান্য কৃষকরাও এ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, ব্লাক রাইস ঔষুধি গুণে সমৃদ্ধ ধান। উচ্চ মূল্য ও চাহিদার কারণে এ ধানের সম্প্রসারণে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ ধান চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাবে কৃষি বিভাগ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়