শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শোক, শ্রদ্ধা এবং ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান মোকাবেলার প্রত্যয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের দিবসটি পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জিয়ারত, মিছিল, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর দামপাড়ায় গরীবুল্লাহ শাহ মাজারে শহীদ মোহাম্মদ আলমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবর জিয়ারত করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নগরীর বাকলিয়ার রসুলবাগ আবাসিক এলাকায় শহীদ শহীদুল ইসলামের কবরে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রশিবির নগরীতে মিছিল বের করে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগের আদর্শই আমাদের পথ দেখাবে গণতন্ত্রের পথে ফিরে যাওয়ার লড়াইয়ে। আমরা অনেকবার অভ্যুত্থান দিবস পালন করেছি, আর নয়। এবার আমাদের স্বপ্ন একটি দুর্নীতিমুক্ত, মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রসম্পন্ন বাংলাদেশ, এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট আমাদের জন্য একদিকে আনন্দের অন্যদিকে বেদনারও। আনন্দ এই জন্য যে, আজকের প্রজন্ম শহীদদের রক্তের ঋণ মনে রেখেছে। কিন্তু বেদনার এই যে, শহীদদের পরিবার আজও কান্নায় ভাসে। তাদের সন্তান, ভাই, আত্মীয় হারানোর শোক আজও মুছে যায়নি। এই শোক আমাদের আনন্দকে ম্লান করে দেয়। আজকের দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়-গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের ঋণ আমরা শোধ করতে পারিনি। সেই ব্যর্থতা কাটাতে হলে বিভাজন ভুলে জাতীয় ঐক্যের পতাকাতলে সবাইকে সমবেত হতে হবে। বিভাজন আর অনৈক্যের রাজনীতি দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখা যাবে না।’
মেয়র বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। আমরা নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম, একাত্তরে আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধে লড়েছে, চব্বিশে আমাদের সন্তানরা শহীদ হয়েছে। বারবার কেন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে হবে ?
গণতন্ত্র ধ্বংস করে কেউ টিকতে পারে না। তাই আমাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ভোটের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনতেই হবে। আমার অধিকার আমার ভোট। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমি যেন কেন্দ্রে গিয়ে আমার ভোট দিতে পারি- এ অধিকার রক্ষা করতেই আমাদের লড়াই।’
এরপর অভ্যুত্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মেয়র। এছাড়া নগরীর টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন(চসিক) কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব কর্মসূচিতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী, সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
সকালে নগরীর বাকলিয়ার রসুলবাগ এলাকায় মোহাম্মদ আলমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করে জেলা প্রশাসন। প্রথমে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। পরে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সরকারি আরও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে প্রত্যয় নিয়ে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধ পরিকর। সরকার জুলাই যোদ্ধাদের পাশে আছে।’
রসুলবাগের কর্মসূচি শেষে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ জামে মসজিদ কবরস্থানে গিয়ে শহীদ শহীদুল ইসলামের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক। দুপুরে সার্কিট হাউসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ও ‘দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি’ নামে দুইটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূর্তিতে নগরীতে ‘জুলাই জাগরণ নবউদ্যমে বিনির্মাণ’ র্যালি বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে র্যালিটি ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
কেউ কেউ আন্দোলনে অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে অভিযোগ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন পাটোয়ারী বলেন, ‘এই অপপ্রয়াস শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। নতুন বাংলাদেশে এই বেইমানদের কোনো স্থান হবে না।’
র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন রনি, মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
একই কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইসলামী ছাত্রশিবির লোহাগাড়ার ঠাকুরদিঘী থেকে পদুয়া পর্যন্ত র্যালি করেছে। এতে ছাত্রশিবির দক্ষিণের সভাপতি আসিফুল্লাহ মুহাম্মদ আরমান, সাবেক সভাপতি আলী হোসাইন, সাবেক জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান তৈয়ব হোসাইন বক্তব্য রাখেন।