দিনাজপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধান রোপনে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন । ছবি : বাসস

।। রোস্তম আলী মন্ডল ।।

দিনাজপুর, ২৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আজ দুপুরে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এবারে চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উপশী জাতের ধান ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৯৯০ হেক্টর ও হাইব্রিড ১১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টন চাল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় উপশী জাত প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন, স্থানীয় জাতের ১ দশমিক ৯৬ মেট্রিক টন ও হাইব্রিড ৪ দশমিক ০১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়।

তিনি বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত এখন পর্যন্ত তুলনা মূলক কম হয়েছে। আর কৃষকেরা বলছেন, রোপা আমন চাষে এবার কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত ৬ জুলাই থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১০ হাজার ৭'শত হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আমন ধান রোপণ হয়েছে বলে তার নিকট প্রাপ্ত তথ্য রয়েছে। 

তিনি আরো জানান, রোপা আমন চাষের জন্য উপজেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুর সদর উপজেলায় ২২ হাজার ১৯০ হেক্টর, বিরল উপজেলায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর, কাহারোল উপজেলায় ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর, খানসামা উপজেলায় ১৩ হাজার ৪০০ হেক্টর, চিরিরবন্দর উপজেলায় ২৪ হাজার ৪০০ হেক্টর, পার্বতীপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর, বিরামপুর উপজেলায় ২৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর, হাকিমপুর উপজেলায় ১২ হাজার ২৬০ হেক্টর ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হবে।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে রোপা আমন চাষ সফল করতে ১১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। 
গত বোরো মৌসুমে জেলায় ইরি-বোরোর অধিক ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের সূত্র অনুযায়ী জেলায় এবার বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।

জেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াই ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কৃষকরা এখন তাদের জমিতে রোপা আমন চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত ৬ জুলাই থেকেই জেলায় আগাম জাতের আমন ধান রোপণ কার্যক্রম কৃষকেরা শুরু করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এই জেলায় এ পর্যন্ত আগাম জাতের ১০ হাজার ৭'শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। ভরা মৌসুমে এখন জেলার প্রতিটি উপজেলায় কৃষকরা আমন ধান চাষের জন্য বীজতলা পরিচর্যাসহ ধান চাষের জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি আমন মৌসুমে অধিক আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এ জন্য বিএডিসি বিভাগ পর্যাপ্ত পরিমাণ কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী রাসায়নিক সার তাদের গুদামে আগাম মজুত রেখেছে। 

বিএডিসি তালিকাভুক্ত জেলায় ১২৬ জন রাসায়নিক সারের ডিলারদের গত ৪ জুলাই এর মধ্যেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া, ডিওপি, টিএসপি এবং এমওপি সার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিলারের অধীনে ৩ জন করে সাব ডিলার রয়েছে। কৃষকদের আমন চাষে রাসায়নিক সারের কোনো ধরনের ঘাটতি না হয় এজন্য বাজারে সারের অবাধ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, গত বছর এই জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৬ হেক্টর জমিতে আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল। অর্জিত ধান থেকে ফলন উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন চাল।