বাসস
  ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৫:২১

রংপুরে সড়ক সংস্কারে অনিয়ম ধরা পড়ল সেনাবাহিনীর হাতে

রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক সংস্কারে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে সেনাবাহিনীর অভিযানে। ছবি : বাসস

।। রেজাউল করিম মানিক ।।

রংপুর, ২৪ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : রংপুরে সড়ক সংস্কারে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের রংপুর চাকঘর থেকে তারাগঞ্জের চিকলী বাজার পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডন এন্টারপ্রাইজ প্রকল্প অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ পাথর ব্যবহার না করে প্রতি স্কয়ার মিটারে ৫ কেজি করে পাথর কম দিয়েছে। বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত টহল দল। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রংপুর মেডিকেল মোড় থেকে পাগলাপীর বাজার, শলেয়াশাহ বাজার থেকে বরাতি সেতু, তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তারাগঞ্জ সেতু এবং তকনাগঞ্জ বাজার থেকে চিকলী বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার অংশে ডিবিএসটিসহ সংস্কারকাজে বরাদ্দ হয় ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪৬ টাকা। ২০২৫সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কাজটি পায় ডন এন্টারপ্রাইজ। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১০ কিলোমিটার সড়কে ডিবিএসটি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ। অক্টোবরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
 
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর সেনানিবাসের ৬৬ ডিভিশনের ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের আওতাধীন ৩৪ বেঙ্গল রেজিমেন্ট পরিচালিত একটি নিয়মিত টহল দল লেফট্যানেন্ট নাজমুলের নেতৃত্বে সিটি মোড় এলাকায় কাজ পরিদর্শনে যায়। সেখানে রাস্তার গঠন ও ব্যবহৃত উপকরণ পরিমাপে অনিয়মের প্রমাণ পান তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান। রাস্তা নির্মাণে কেন এরকম অনিয়ম? এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি প্রকৌশলী।

সেনা কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্প অনুযায়ী প্রতি স্কয়ার মিটারে ২৩ কেজি পাথর ব্যবহারের শর্ত থাকলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে ১৮ কেজি করে। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার মিটারে ৫ কেজি পাথর কম ব্যবহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডন এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্ট অনুযায়ী ২৩ কেজি প্রতিস্কয়ারে পাথর দেওয়ার কথা ছিল। সেনাবাহিনী টেস্ট করার পর ১৮ কেজি পেয়েছে। আমরা তো সড়ক ও জনপথের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কাজ করছি। বেশি জায়গা না, ৮০০ মিটারে ৫ কেজি করে পাথর কম  দেয়া হয়েছে। আমরা এটা আবার রিপায়ার করে দিব।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি মেরামতের শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রতিবাদ করার পরও তারা কর্ণপাত করছিল না। সেনাবাহিনী যা করেছে তা ভালো কাজ করেছে। রাস্তাটি ভালোভাবে মেরামত হলে সকলেরই উপকার হবে বলে জানান তারা।

সেনা কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট নাজমুল জানান, রাস্তা মেরামতে অনিয়ম হচ্ছে এমন খবর পেয়েই তারা অভিযান চালান। এটি তাদের নিয়মিত অভিযানের মধ্যেই পড়ে।

তবে জানতে চাইলে দায়সারা বক্তব্য দেন সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ডিজাইনে ছিল ২৩ কেজি, সেখানে ১৮ কেজি পেয়েছে। আমাদের দেখভাল করার লোকজন রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘ একটা এরিয়া, কমবেশি হতে পারে। সেটা অবশ্যই আমরা ঠিক করে দিব।