শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : গেটস ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় আজ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র (এফএও) সঙ্গে যৌথভাবে একটি যুগান্তকারী কৃষি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে।
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অংশীজনদের সমন্বয়ে আয়োজিত কর্মশালায় ‘কৃষি খাত রূপান্তর কর্মসূচিতে টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক বিনিয়োগের জন্য কারিগরি সহায়তা (এএসটিপি)’ শীর্ষক এই প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়।
এএসটিপি প্রকল্পটি বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আধুনিকায়ন, টেকসই, সহনশীল ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ও দেশীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারের বৃহত্তর কৃষি রূপান্তর কর্মসূচির (এটিপি) আওতাধীন এই উদ্যোগটি তথ্য-প্রমাণ নির্ভর পরিকল্পনা, নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক বিনিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে ডিজাইন করা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং গত এপ্রিল মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), যেখানে প্রধান নির্বাহী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। প্রধান সহযোগী হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)।
এই প্রকল্পটি জাতীয় কৃষি অগ্রাধিকার: যেমন- বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ এবং জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ এর সাথে কৌশলগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এফএও সদর দপ্তরের সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন বিভাগের পরিচালক আনপিং ইয়ি, গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ চতুর্বেদী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত এফএও প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি।
বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া এবং সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০-এর অধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কৃষি রূপান্তরের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এএসটিপি প্রকল্পটি এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে, যখন বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের আগে কৃষিখাতের অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ করছে। এই প্রকল্প আমাদের জাতীয় নীতিকে তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কৌশলগতভাবে বিনিয়োগ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে।
আনপিং ইয়ি বলেন, এএসটিপি প্রকল্পটি সত্যিই সাউথ-সাউথ এবং ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন ডিভিশনের মূল দর্শনের প্রতিফলন, যা পারস্পরিক শিক্ষণ, যৌথ উদ্ভাবন এবং স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরীক্ষিত সমাধানগুলোর অভিযোজন। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বৈশ্বিক জ্ঞানভিত্তিক, আঞ্চলিকভাবে প্রাসঙ্গিক এবং স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়নযোগ্য উদ্ভাবনকে অভিযোজিত করার মাধ্যমে এই প্রকল্প জ্ঞানকে বাস্তব ও স্থায়ী রূপ দিচ্ছে।
জিয়াওকুন শি বাংলাদেশের প্রত্যাশিত কৃষি রূপান্তর অর্জনে সরকারের সঙ্গে এফএও’র চলমান সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি শুধু একটি অংশীদারিত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের কৃষি খাত রূপান্তরের পথে একটি সাহসী পদক্ষেপ। বাংলাদেশ সরকার, এফএও এবং গেটস ফাউন্ডেশন একত্রিতভাবে কাজ করে কেবল বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে না বরং একটি টেকসই ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তুলছে। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং পার্টনার প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এএসটিপি দীর্ঘমেয়াদি, কাঠামোগত পরিবর্তন সাধনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
এই কর্মশালাটি কারিগরি সংলাপ এবং অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। এতে প্রকল্পের বিভিন্ন উপাদান ও লক্ষ্য নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এরপর একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তথ্য-প্রমাণ নির্ভর পরিকল্পনা, বিনিয়োগ, সাউথ-সাউথ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির মাধ্যমে ভিশনকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
অংশগ্রহণকারীরা সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং তথ্য-প্রমাণ নির্ভর পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষি রূপান্তরকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।