বাসস
  ২১ জুলাই ২০২৫, ০০:৫২

দুই দাবিতে বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটির মানববন্ধন

ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২৫ (বাসস): ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক প্রস্তাবনা বাতিল এবং ক্যাডেট ও রেটিংস ভর্তি কমিয়ে চাকরির সংকট নিরসনের দাবিতে সর্বস্তরের মেরিনারদের মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সামনে আজ এ কর্মসূচিতে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি’র মুখ্য আহ্বায়ক মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন আতিক উল আজম খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার গোলাম জিলানি, চিফ ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হাসান, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ নাসের, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান, চিফ ইঞ্জিনিয়ার রইচ উদ্দিন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, মার্চেন্ট মেরিন অফিসার রায়হান আহমেদসহ অনেকে।


এ সময় বক্তারা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের ভূমিকা রাখা মেরিন সেক্টর আজ চরম সংকটে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত মেরিন সেক্টর। 

প্রতি বছর এই সেক্টর থেকে গড়ে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি এখন ধ্বংসের মুখে বলে দাবী করেন বক্তারা।

তারা বলেন, বর্তমানে ভিসা সমস্যাসহ নানা জটিলতার কারণে বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য বিদেশি জাহাজে কাজ পাওয়ার সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শুধু ক্যাডেট ও রেটিংস পর্যায়েই বর্তমানে অধিকাংশ নতুন সিডিসিপ্রাপ্ত মেরিনার বেকার এবং আগামী ৫ মাসে নতুন ব্যাচ পাসড আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা বেড়ে যাবে-যা একটি ভয়াবহ সংকেত। চলমান এই সংকটের মধ্যেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব করা হয়েছে যেন মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের অফিসার ক্যাডেট পর্যায়ে সিডিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সারটিফিকেট) প্রদান করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দেশের বিদ্যমান মেরিটাইম প্রশিক্ষণ বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। ডিপ্লোমা ইন মেরিন টেকনোলজি একটি এসএসসি-ভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা কর্মসূচি, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অফিসার ক্যাডেট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এসটিসিডব্লিউ কোড এ-ওওও/১ অনুযায়ী অনুমোদিত প্রশিক্ষণ নয়।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিনেন্স ১৯৮৩ অনুযায়ী মার্চেন্ট মেরিন শিক্ষায়তনের অনুমোদন, প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন এবং মান নিয়ন্ত্রণ এর বিধি ২৬ এর  ধারা ৪ অনুযায়ী, ডিপ্লোমা ইন মেরিন টেকনোলজির কোর্স নৌ পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমিত নয়। মেরিন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলো ওই আইনে উল্লেখিত প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক এবং প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বিধি ৩৬.১-এর ক, খ, গ, ঘ , ৩৬.২ এবং বিশেষ করে  ৩৬.৩-এ বর্ণিত যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী পরিচালিত হয় না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জারি করা “নৌযান অধীক্ষক পরীক্ষার পরিদর্শন পরিচালনার বিধিমালা ২০২১”-এর ৩৬(১)(ক)-(গ) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “পরীক্ষককে অবশ্যই বৈদেশিক জাহাজে চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকিতে হইবে এবং  অনুমোদিত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করিতে হইবে।”

এ সময় আরও বলা হয়, মেরিন একাডেমি ব্যতিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীদের জাহাজে যোগদানের পূর্বে কোনো অনুমোদিত মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান হতে ২৪ মাসের ট্রেনিং করা বাধ্যতামূলক। এই অবস্থায় মাত্র ৬ মাসের ট্রেনিং করে ডিপ্লোমা ইন মেরিন টেকনোলজির ছাত্রদের অফিসার সিডিসি প্রদানের প্রস্তাবনাটি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠান না হয়ে, সম্পূর্ণভাবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকে পাশ কাটিয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সিডিসি দেওয়ার এ ধরনের অপচেষ্টা বাংলাদেশের মেরিন সেক্টরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করবে।

মানববন্ধনে বলা হয়, এভাবে সিডিসি ইস্যু করা হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আইওএম-এর হোয়াইট লিস্ট থেকে বাদ পড়তে পারে; আন্তর্জাতিক রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলো নিম্নমানের কারণে বাংলাদেশি নাবিকদের ওপর আস্থা হারাবে; যথাযথভাবে ট্রেনিং সম্পন্ন করা যোগ্য ক্যাডেটদের প্রতি চরম বৈষম্য করা হবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের মেরিটাইম পেশা খাতের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস হবে।

মানববন্ধনে যে ২ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে তা হলো-ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ক্যাডেট সিডিসি প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাতিলের জন্য নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেরিন ক্যাডেট এবং রেটিংস রিক্রুটমেন্ট বন্ধ করতে হবে। প্রতিবছর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জাহাজে ফ্রেশ ক্যাডেট এবং রেটিংসদের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে সেই চাহিদার ভিত্তিতে ক্যাডেট এবং রেটিংস ভর্তির নীতিমালা তৈরি করে তা গেজেট আকারে কার্যকর করা।