শিরোনাম
।। মো. আমিনুল হক।।
সুনামগঞ্জ, ১৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : দেশের সীমান্তবর্তী জেলা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বড়কাটা গ্রামের একমাত্র সংযোগ সড়কে নেই কোনো সেতু। বড়কাটাসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ চলাচল করে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে। বর্ষায় এই সাঁকো হয়ে ওঠে আরো ঝুঁকিপূর্ণ। নিরুপায় গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ পথে যাতায়াত করেন।
এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় একটি সংযোগ সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও আজও পর্যন্ত নজরে পড়েনি প্রশাসনের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলাটি উন্নয়ন বঞ্চিত। কোথাও কোথাও সংযোগ সড়ক নেই, কোথাও আবার নেই প্রয়োজনীয় সেতু। উপজেলার সাথে গ্রামের একমাত্র সংযোগ পথে নেই পাকা সড়ক।
তারা জানান, এলাকার মানুষ চাঁদা সংগ্রহ করে নিজেরাই বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। বর্ষা, গ্রীষ্ম, শীত সব ঋতুতেই একমাত্র ভরসা এই সাঁকো। বর্ষা মৌসুমে এই সাঁকো হয়ে ওঠে আরো ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও রোগীরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড়কাটা গ্রামে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বাস। রয়েছে দুটি মসজিদ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুধু বড়কাটা নয়, পার্শ্ববর্তী বৈঠাখাই, এরুয়াখাই, তিলুরাকান্দি ও চকবাজার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে হাট-বাজার, স্কুল, মাদ্রাসায় যাতায়াত করেন। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। তীব্র স্রোত আর পানির উচ্চতায় সাঁকো পারাপারে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় থাকেন স্থানীয়রা।
বড়কাটা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হেকিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক সংযোগে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিবার নির্বাচনের আগে আশ্বাস পাই, পরে আর কেউ ফিরেও তাকায় না।
স্কুলছাত্রী রিমা আক্তার বলেন, সাঁকোটি খুব ছোট। ভারসাম্য হারালেই পানিতে পড়ে যেতে হয়। এছাড়া বৃষ্টির সময় সাঁকো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়, তখন স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বড়কাটা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ বলেন, একটি সেতু না থাকা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য দুর্ভাগ্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছেন সবাই। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, মানববন্ধন করেছি কিন্তু দেখার কেউ নেই।
শিক্ষক মো. আব্দুস শহীদ বলেন, সেতু না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী বর্ষার মৌসুমে স্কুলে আসতে পারে না।
এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের সকলের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বড়কাটা ও আশপাশের গ্রামের সেতু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বার বার আশ্বাস দিয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এখানে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগির এটি বাস্তবায়ন হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবো।