বাসস
  ১২ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫৯

সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বাড়ছেই, বিপাকে নদী পাড়ের মানুষ

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ছবি : বাসস

।। হারুন অর রশিদ খান হাসান ।।

সিরাজগঞ্জ, ১২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই  চলেছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দ্রুত নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক, শ্রমিক ও হাট-বাজারে চলাচলকারী নিম্ন আয়ের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৭  ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৮২  সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এতে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতে পানি উঠে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি হাটবাজারে কাঁচা সবজির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। নদী ভাঙনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। ভাঙন কবলিত  এসব এলাকার বেশকিছু আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। দিনভর বৃষ্টির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি ও বাহুকা, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন, চৌহালী উপজেলার খাসকউিলিয়া ইউনিয়নের জনতার স্কুল এলাকা, উমারপুর ইউনিয়ন, স্থল ইউনিয়নের তেঘরি, কুড়াগাছা, লাঙ্গলমুড়া, ছোট চৌহালী ও ঘোড়জান ইউনিয়নের ফুলহারা ও চালুহারা গ্রাম, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোপালপুর, সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, মাকড়া, ভাটদিঘুলিয়া ও কৈজুরী ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া গ্রাম এবং বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

ভাঙন কবলিত এলাকার আখ, পাট, বাদাম, পটল, সবজি ক্ষেত ও কাউনসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের তাণ্ডবে কাজিপুর উপজেলার চর গিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি ও শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ার পাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের তেঘরি এলাকার মানুষ নদী ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে গত ৬ জুলাই নদীতীরে মানববন্ধন করেছে।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি চরের বাসিন্দা মান্নান বলেন, বৃষ্টির কারণে  ক্ষেতের সবজি শহরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু যোগাযোগ অসুবিধার কারণে ক্ষেতের সবজি পচে যাচ্ছে। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদীতীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এছাড়া নদীতীরে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা নেই। উজানের পানি নেমে যাচ্ছে। আশা করছি, এখানেও পানি বাড়ার হার ধীরে ধীরে কমবে। ’