বাসস
  ১১ জুলাই ২০২৫, ১৬:২৫
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৭:০২

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদী ভাঙনে দোকান ও বসতবাড়ি বিলীন

ছবি : বাসস

শরীয়তপুর, ১১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মাসেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সংলগ্ন মঙ্গলমাঝির ঘাট এলাকায় ডানতীর রক্ষাবাঁধে প্রবল বর্ষণ ও পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের ফলে ধস নেমে গত সোমবার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

এ ভাঙনে অন্তত ২৫টি দোকান ১০/১৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের একটাই দাবি জরুরি ভিত্তিতে অত্র এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে তাদের ৭/৮টি গ্রাম রক্ষা করা হোক ।

নদী ভাঙনে  ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া বেগম , রাজা মাদবর, খলিল মাদবর ,সেলিম শেখ জানান, জাজিরা উপজেলার পদ্মাসেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সংলগ্ন মঙ্গলমাঝির ঘাট এলাকায় ডানতীর রক্ষাবাঁধে প্রবল বর্ষণ ও নদীর তীব্র স্রোতের ফলে প্রায় ৫০০ মিটার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

গত সোমবার বিকেল ৪টায় হঠাৎ করে প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে বাঁধ ধসে পড়ে। এ ভাঙনে অব্যাহত ভাবে দফায় দফায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার নদীগর্ভ বাড়ি ঘর দোকানপাট সহ বিলীন হয়ে যায়। এতে করে অন্তত ২৫টি দোকান ১০/১৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ভাঙনের ফলে ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এদের অনেকেই বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছে।

ঐ সব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কখন জানি তাদের বাকি জমি জমা মাথা গোজার ঠাঁই টুকু নিয়ে যায়। তারা নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কোনোমতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নদীর পাড়ের সাদুল মাদবর সহায় সম্বল বাড়ি ঘর হারিয়ে এখন পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তার সহায় সম্বল আর কিছুই বলতে নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন সাংবাদিক বা প্রশাসনের লোকজন দেখলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। 

জেলা প্রশাসক মিজ তাহসিনা বেগম, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায়, পদ্মা দক্ষিণ থানার ওসি আকরাম হোসেন, জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইসচেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি মো. আবুল হোসেন সর্দার সহ স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। 

ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে জেলা প্রশাসক নগদ টাকা, ঢেউটিন, শুকনো খাবার চাল, ডাল তেল লবণ, বিতরণ করেছেন। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইসচেয়ারম্যান ৪৬টি পরিবারের মধ্যে নগদ ২০০০ করে টাকা বিতরণ করেছেন। 

এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসডিএস এলাকা সার্ভে করে সহায়তার জন্য তালিকা প্রস্তুত করেছেন। বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও রেডক্রিসেন্ট শরীয়তপুর ইউনিটের যুবরেডক্রিসেন্ট কর্মীরা সার্বক্ষণিক উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

গত নভেম্বর থেকে এ এলাকায় ভাঙনের  তীব্রতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ভাঙন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনরাত অবিরাম জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন  রোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকদিন থেমে থেমে এ ভাঙন শুরু হয়।বিশেষজ্ঞদের মতে নদীর মূল স্রোতে মূল নদী দিয়ে প্রবাহিত করতে না পারলে অর্থাৎ পদ্মাসেতু পূর্ব পার্শ্বে বালু ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মূল নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে ডানতীরের বেড়িবাঁধে আঘাত হানছে। নদী ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে না পরলে ভাঙন রোধ করা কষ্টকর হবে। তাছাড়া স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হলে এ ভাঙন রোধ হবেনা। ফলে এ এলাকার ৭/৮টি গ্রাম বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের একটাই দাবি জরুরি ভিত্তিতে অত্র এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে তাদের ৭/৮টি গ্রাম রক্ষা করা হোক ।

এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত জরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে একখণ্ড জমিতে ঘর তুলে দিনমজুর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। পদ্মা নদী ভাঙনে গত সোমবার সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমরা অন্যেও বাড়িতে থাকি। কীভাবে বাঁচবো কোথায় থাকুম জানি না। সরকারের কাছে সাহায্য চাই।

দেলোয়র মাদবর বলেন, পদ্মানদী আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায়। অন্যের জায়গায় টিনের ঘর করে দিন কাটছে। সরকারের কাছে দাবি এ এলাকায় জরুরিভাবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ করে আমাদের রক্ষা করা হোক।

জেলার পানি উন্নয়ন বোডের্র  নির্বাহী প্রকৌশলী তারিক হাসান বলেন, ঘটনার পরপর আমরা ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং করার কাজ করছি। অবিরাম ভাবে দিনরাত কাজ চলছে। এ ছাড়া স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। তবে জরুরি ভাবে ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা আবশ্যক।