বাসস
  ০৩ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৪

দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সেনাবাহিনী বদ্ধ পরিকর

ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদা দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে সেনাসদর।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। 

লিখিত বক্তব্যে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে সেনাসদস্যরা দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। 

ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও জানানো হয়। 

চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং গত বছরের আগস্ট থেকে  এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ৫৬২ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী রয়েছে।

সেনাবাহিনী গত ২১ জুন খুলনা জেলার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুলবুলকে চার সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। উক্ত অভিযানে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় পিস্তল, একটি শর্টগান এবং দুই রাউন্ড অ্যামুনিশন উদ্ধার করা হয়। 

গত ২৯-৩০ জুন মীর হাজিরবাগে সন্ত্রাসী আল আমীন গ্রুপের দুইজন সক্রিয় সদস্য আনিছ ও হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলভার, তিনটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

মাদক এর বিরুদ্ধে অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং গত আগস্ট হতে এ পর্যন্ত মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫২১ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। 

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয় গত ১৭ জুন টঙ্গি মাজার বস্তি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ২৪ জন ও গত ২৬ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৭ জুন সুনামগঞ্জ জেলায় বিপুল পরিমাণে গলদা চিংড়ি উদ্ধার করা হয় এবং  দুইজন চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও গত ১৯, ২১ এবং ২৪ জুন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ প্রসাধন সামগ্রী এবং শাড়ি জব্দ করা হয়। 

ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৯ জুন ফরিদপুর জেলায় ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ কারখানাটি সাময়িক বন্ধ এবং মালিককে গ্রেফতার করা হয়।

গত ২২ জুন উত্তরায় নিজ বাসভবনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা মব ভায়োলেন্সের শিকার হন। এ ঘটনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেনাবাহিনী ঐ দিনই মব ভায়োলেন্সের  সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা শুরু করে। 

তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সেনাবাহিনী গত ২৩ জুন উত্তরা থেকে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত মো. হানিফকে গ্রেফতার করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে কিন্তু ২৫ জুন উক্ত ঘটনার মূলহোতা মোজাম্মেল হক ঢালী আদালত হতে আগাম জামিন নেয়।

গত ২৬ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে সংঘটিত নারী নির্যাতন ও বর্বরতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। মূল আসামি ফজর আলী ও  ভিডিও ধারণ করা আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানে সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৪ হাজার ৭৯০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ঢাকা  সিএমএইচ-এ  ২২ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সেনাবাহিনীর সদস্যগণ গত ২৭ জুন ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রথযাত্রা উৎসবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে।

সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক  ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।