বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ২১:১৮

অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় সংকোচন করেছে ৪৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস): অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালীন বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় সংকোচন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ রয়েছে। এই পাঁচ বিভাগের মোট ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৪৬,৩০৮.০৪ কোটি টাকা।

বুধবার (৪ জুন) সকালে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সরকার কী করছে? প্রায়ই শুনি। আমরা বলি, তবু অনেকেই মানতে চান না। আজ মনে হলো একটা উদাহরণ সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ সবাইকে জানানো দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পুনঃমূল্যয়ন করে দেখা গেছে যে প্রায় সব প্রকল্পেই অযৌক্তিকভাবে ইস্টিমেটেড ব্যয় বা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকার এই খরচ কমিয়ে এনেছে।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ব্যয় সংকোচন হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৮৫৪.৩২ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৮ হাজার ৩৬.৯০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ব্যয় সংকোচন ৭ হাজার ৪৫৪.৩১ কোটি টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ব্যয় সংকোচন ১২ হাজার ৪২৫.৫১ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে এই পাঁচ বিভাগের মোট ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৪৬ হাজার ৩০৮.০৪ কোটি টাকা।

তিনি লেখেন, এই টাকাটা লুটপাটের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকার জনগণের এ টাকাটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ টাকা দিয়ে জ্বালানি খাতে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।

প্রেস উইংয়ের পাঠানো ব্যয় সংকোচনের তথ্য চিত্র তুলে ধরা হলো:

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ব্যয় সংকোচন:

ভূঞাপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়ক (জেড-৪৮০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প- ৫৪.১৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প- ১৫৭৬.৫ কোটি টাকা। আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ- ৬৫৪ কোটি টাকা। ওয়েস্টার্ন ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট- ৬১৫.৪৭ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প- ৪৫.৫৩ কোটি টাকা। ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ (জেড-৫৭০৬), ডোমার-(বোড়াগাড়ী)-জলঢাকা (ভাদুরদরগাহ) (জেড-৫৭০৪) এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা (জেড- ৫৭০৩) জেলা মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ- ২৪০.৪৫ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন- ২১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের হবিগঞ্জ অংশের ৪টি প্যাকেজ অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে- ৪৪২.৭৭ কোটি টাকা। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) সাউদার্ন রুট- ৬৮৭২.৪৬ কোটি টাকা।  ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন মেরামত ৩৩২ কোটি টাকা।

সেতু বিভাগ:

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় সংকোচন- ১৮৩৫ কোটি টাকা। মিঠামইন উপজেলায় উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় সংকোচন- ৫৫০০ কোটি টাকা। কর্ণফুলী টানেল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি পর্যালোচনাক্রমে ব্যয় সংকোচন-১২৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি পর্যালোচনাক্রমে ব্যয় সংকোচন- ৭৫ কোটি টাকা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়:

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প- ৬২১.৮৯ কোটি টাকা। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প- ৬৬৯৮.৫০ কোটি টাকা। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প- ৫১৮.০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (রোলিং স্টক সংগ্রহ) (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প- ৩৯.১২ কোটি টাকা। আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) শীর্ষক প্রকল্প- ১৫৯.২৮ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ:

১০ শতাংশ ব্যয় হ্রাসের পরিকল্পনার আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগস্ট/২০২৪ হতে মে/২০২৫ পর্যন্ত ব্যয় সাশ্রয়-১৫০০ কোটি টাকা। জ্বালানি ভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের জ্বালানি আমদানির সার্ভিস চার্জ ৯ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করার মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয়- ৪৭০ কোটি টাকা। তরল জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি শিপমেন্টে ১৫,০০০ মেট্রিক টনের পরিবর্তে ২০,০০০ মেট্রিক টন নির্ধারণের ফলে ব্যয় সাশ্রয়-৩৫৪ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ ৮.৪৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিদ্যুতের বর্তমান গড় বিক্রয়মূল্য (৮.৯৫ টাকা) এর চেয়ে কম। এ উদ্যোগের ফলে বছরে সাশ্রয়- ২৫০০কোটি টাকা ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ট্যারিফ হ্রাসকরণের মাধ্যমে সাশ্রয়- ২৬৩০.৩১ কোটি টাকা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ:

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ রহিত করে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ১৭ কার্গো এলএনজি ক্রয়ে ২০২৪ সালের তুলনায় অর্থ সাশ্রয়-১২৬.৭৬ কোটি টাকা। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোট ১৫০টি অনুসন্ধান/উন্নয়ন কূপ খনন করাসহ নতুন ৩টি রিগ ক্রয় করে বাপেক্স এর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি অনুসন্ধান/উন্নয়ন কূপ খনন করে দৈনিক ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস (গড় মূল্য ৬ কোটি টাকা) জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে- সাশ্রয় ২১৯০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক দরপত্রের শর্ত শিথিল করাসহ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকরী নেগোসিয়েশনের ফলে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ২০২৩- ২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৯,৮১৪ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ এবং তদসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ প্রকল্প- ৫৬.২৫ কোটি টাকা। কেজিডিসিএল-এর আবাসিক গ্রাহকগণের জন্য প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্প-৩৩.৫৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রামে অগ্রাবাদ এলাকায় ৩টি বেইজমেন্ট ফ্লোরসহ ১৯তলা মেঘনা ভবন নির্মাণ (২য় সংশোধন প্রকল্প)- ৫৮.৬৮ কোটি টাকা। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ প্রকল্প-১১৭.৭২ কোটি টাকা। ফৌজদারহাট-সীতাকুন্ডু-মীরসরাই পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প-১৮.৮৩ কোটি টাকা। ডিজাইন, সাপ্লাই, ইনস্টলেশন, টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং অব কাস্টডি ট্রান্সফার ফো মিটার উইথ সুপারভাইসরি কন্ট্রোল এট ইআরএল ট্যাংক ফার্ম- ৯.৭৪৭৭ কোটি টাকা।