শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিছক রাজনৈতিক নেতা বললে তাঁকে ছোট করা হবে। তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ছিলেন ‘ন্যাশন বিল্ডার’। জাতিকে গড়ে তোলা ও জাতিকে একটি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা, এই দায়িত্ব ও কর্তব্য তিনি পালন করেছেন। এটি করতে গিয়ে তাকে জাতি গঠনমূলক অনেক কাজ করতে হয়েছে।
বাসস প্রতিনিধি রুমানা জামানের সাথে একান্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি আরও বলেন, এ দেশে আমরা এখনো ভালো যা কিছু দেখি, তার ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এর পেছনে রয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে তিনটি স্তম্ভের ওপর। সেগুলো হলো কৃষি, পোশাকশিল্প এবং বিদেশি রেমিট্যান্স।
দেশের মানুষের কল্যাণে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের কৃষিকে স্বনির্ভর করে তোলা, কৃষির উৎপাদন দ্বিগুণ, চাষের নিবিড়তা বৃদ্ধি , সেচ সুবিধা, পর্যাপ্ত সারের ও বীজের ব্যবস্থা করা- এ সবকিছু জিয়াউর রহমান খুব নিষ্ঠার সঙ্গে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৭১ সালের পর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হতো, তার চেয়ে এখন তিন গুণ খাদ্য উৎপাদন হয়। শাকসবজিসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ফল ও ফুলের উৎপাদন অনেক বাড়ছে। হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অগ্রগতির পেছনে রয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি তাঁর বক্তৃতা ও বিবৃতিতে সব সময় বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলতেন। এসব কাজ কীভাবে করা যায় তার জন্য তিনি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হেঁটে বেড়াতেন। কৃষকের ঘরে ঘরে ধরনা দিয়েছেন। কৃষকদের জীবন সুন্দর ও মসৃণ করার জন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিয়েছেন। কী করে কৃষকরা দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে বের হয়ে আসতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করেছেন। কী করে কৃষকরা নিজের উৎপাদিত ফসল দিয়েই নিজের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারে। জিয়াউর রহমান যে কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়েছেন এখনো মানুষ তা স্মরণ করে। এতে করে বাংলাদেশের গ্রাম একটা ভিন্ন চেহারা খুঁজে পায়। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। গ্রামের উন্নয়নের দিকে তার মনোযোগ ছিল। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এসব কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের অন্যতম আয়ের উৎস গার্মেন্টসশিল্প। বাংলাদেশের গার্মেন্টসশিল্প যাতে গড়ে ওঠে সে জন্য তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার দাইউ কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
তাদের সহযোগিতায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশে গার্মেন্টসশিল্প স্থাপনে তাদের যে ভূমিকা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে তিনি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তা ছাড়া শিল্পের জন্য সহায়ক যে নীতি ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ এবং ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি’ অনেক সাহসিকতার সঙ্গে তিনি করেছেন। ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি’ পলিসি ভারতের মতো রাষ্ট্রও তখন করতে সাহস পায়নি। অথচ তিনি সেটা করেছেন। বাংলাদেশের গার্মেন্টসশিল্প এখন বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এর ফলে আমাদের নারীদের নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
আমাদের দেশের শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষকে কাজের জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন উল্লখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ককে তিনি আরও মজবুত করেছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের বড় একটা অংশ পাঠাচ্ছে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষ। রেমিট্যান্সের কারণেই বাংলাদেশ অনেকটা রক্ষা পাচ্ছে। এখন বাংলাদেশে এক সংকটময় সময় যাচ্ছে। এই সংকটে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অনেক বেশি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয়ের গুরুত¦পূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, আর এসব বিষয়ে জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের অবদান অতুলনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তখন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব কোনো দিকনির্দেশনা দিয়ে যাননি। ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল। তারা ভেবেছিল তাদের স্বপ্ন শেষ।
তাদের সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। তারা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না এই ভাবনায় হতাশ হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি দেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। জিয়াউর রহমানের এই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে মানুষ আবার হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে শক্তি ও সাহস পায়। তাঁর কথায় মানুষ অভয় পায়। তখন মানুষ নতুন করে চিন্তা করতে থাকে। তখন মানুষ ভাবতে থাকে দেশের একটা ভবিষ্যৎ আছে।
জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেক্টরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে কারণে যুদ্ধের পর তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে বিশাল অবদান, তা অস্বীকার করা কোন উপায় নেই। তিনি একদিকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আবার দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছেন।
তিনি একজন মেজর ছিলেন, তাকে দেশের মানুষ চিনত না। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়েই তিনি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এভাবে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। পঁচাত্তরের নভেম্বরে খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেই অভ্যুত্থানের পর দেখা গেল দেশ সরকারশূন্য অবস্থায় পড়ে গেছে। ৪-৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না। আবারও মানুষ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেল। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠল। ওই সময়ে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করা হয়েছিল। সৈনিকদের মধ্যে জিয়াউর রহমান অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। সে কারণেই সৈনিকরা তাকে মুক্ত করে। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দেখেন দেশের বিশৃঙ্খল অবস্থা। তিনি সেই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক সাহসিকতার সঙ্গে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার ফলে আমাদের সেনাবাহিনী রক্ষা পায়। সেনাবাহিনী যদি সেদিন রক্ষা না পেত, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপদের সম্মুখীন হতো।