বাসস
  ২১ মে ২০২৫, ১৫:০৭

মেহেরপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৭১ হাজার পশু

ছবি : বাসস

মেহেরপুর, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির জন্য জেলার চাহিদার দ্বিগুণ পশু প্রস্তুত হয়েছে। অতিরিক্ত পশু দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৩টি পশু। স্থানীয়ভাবে কোরবানির চাহিদা ৯০ হাজার পশু। উদ্বৃত্ব পালন হয়েছে ৮১ হাজার পশু। 

খামারিদের মতে মেহেরপুরে পালিত কোরবানির পশুর  অনেকাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার বাজারে বেচা-কেনা করা হয়। এছাড়া সিলেট ও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা কিনে নিয়ে যায়। । খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় এবছর পশু পালন কমেছে।  

জেলায় ছোটবড় মিলে ৪’শ টি  খামার আছে। বছর জুড়ে খামারে গরু লালন-পালনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াতে জেলায় এবার পশু পালন কমেছে। যার ফলে এবার পশুর দাম কিছুটা বেড়েছে। জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, নেপালী, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। বিভিন্ন খামারীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে আনন্দ আবার বিক্রি হবে কিনা কারোর কপালে চিন্তার ভাজ । 

দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে দুয়েকটি করে গরু পালন হচ্ছে। পারিবারিকভাবে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারে। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে কাঙ্খিত বিক্রির সময়। স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে গরু পালনকারী পরিবারগুলোতে।  

জেলার সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের খামারী আখের আলী জানান, গ্রাম থেকে শহরে গরু পালন হচ্ছে সমানে। গ্রামের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরুগুলো। পরম যত্নে নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। এই গরুগুলো তাদের  বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। পুষ্টিসম্মৃদ্ধ খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় গরুগুলো বেড়ে ওঠে কাঙ্খিত মাত্রায়। জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভুমিকা পালন করছে গরু পালন। তার খামারে আছে ১৮টি গরু। গত বছর ৩৫টি গরু ছিল। এ বছর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় খামারে গরু পালন কমেছে। প্রতিবছর চট্টগ্রামের ব্যাপারিরা কিনে নিয়ে যায়। 
নানা রঙের স্বপ্নের জাল বোনা সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের লিলি বেগম জানান- তিনি গত কোরবারি পর ৬০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন পালনে  খরচ  গেছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় গরুটি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। তারমতো ওই গ্রামে অন্তত ৩০টি পরিবারে একটি করে গরু পালন করেছেন কোরবানির জন্য। এই গরু পালন করেই সফলতার মুখ  দেখছেন তারা।  

সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের খামার মালিক জিল্লুর রহমান জানান, এবার কোরবানি সামনে রেখে লাভের আশায় ৪৫টি গরু ও ১শ টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন। বর্তমানে অনলাইনে পশু বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন- এবার বিনিয়োগও করেছেন প্রচুর অর্থ। গত দুই বছর ধরে অনলাইনে পশু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

একই কথা জানান ঝাউবাড়িয়া গ্রামের প্রান্তিক খামার মালিক মিলন রহমান। তিনি জানান, কোরবানি সামনে রেখে পরিবারের সর্বস্ব ব্যয় করে তিনি ৩০ টি গরু মোটাতাজা করেছেন। নিজে ঠিকমতো না খেয়ে গরুর পেছনে ব্যয় করেছেন অর্থ ও শ্রম। তবে দাম বেশি হওয়ায় এবার পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জেলার বেশ কজন খামার মালিকরা।

সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী  আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি। তিনি প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু ছাগল কিনে ট্রাকযোগে ঢাকার পশু হাটে বিক্রি করেন। এবছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ব্যানার্জী বলেন, এ জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু হিসেবে ষাঁড়-বলদ-গাভি মিলিয়ে ৫৩ হাজার ২৯৭টি গরু, ৫৯১ টি মহিষ, ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭১টি ছাগল এবং ২ হাজার ৬৯৪টি ভেড়া রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।