শিরোনাম
দিনাজপুর, ১৯ মে ২০২৫ (বাসস) : সারাদেশে শুরু হয়েছে ভুট্টা তোলার মৌসুম। জেলার ১৩টি উপজেলায় পুরোদমে চলছে ভুট্টা কাটা ও মাড়াই। ভুট্টার আশাতীত ফলনেও খুশি কৃষকেরা। জমি থেকেই ভালো দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভুট্টা। সব মিলিয়ে জেলা জুড়ে চলছে ভুট্টা চাষিদের মহোৎসব।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, গত ২০ দিন ধরে জেলার কৃষকেরা কৃষি বিভাগ থেকে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হারভেস্টসহ আধুনিক ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র ব্যবহার করে কম সময়ে ভুট্টা মাড়াই করছেন। জেলায় তাপ প্রবাহ থাকায় মাড়াই করা ভুট্টা অনেক কম সময়ের মধ্যেই শুকানো যাচ্ছে। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জেলায় উৎপাদিত ভুট্টা মাড়াই করে কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মোকছেদ আলী জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে, ভুট্টা মাড়াই করে কাঁচা ভুট্টা জমি থেকেই ৩২ থেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারছেন।
এ অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে চলমান তাপ প্রবাহ যেন ভুট্টা ব্যবসায়ীদের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তাপের কারণে পাইকারেরা জমি থেকে কাঁচা ভুট্টা কিনে নিয়ে তাদের চাতালে কম সময়ের মধ্যে ভুট্টা শুকাতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমানে শুকনো ভুট্টা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন পাইকারেরা।
ভুট্টা ক্রয় করতে বড় কোম্পানি থাইল্যান্ড ভিত্তিক সিপি এবং দেশীয় কোম্পানির নারিশ জেলার বেশ কয়টি স্থানে বড় পরিসরে ভুট্টা ক্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারা শুকনো ভুট্টা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন।
অনেক মজুতদার ব্যবসায়ী কাঁচা ভুট্টা কিনে তাদের চাতালে শুকানোর পর মজুদ করে রাখছেন। ভুট্টা ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মজিদ জানান, প্রতি বছর শুকনা ভুট্টা মজুদ করেন। মৌসুম শেষ হলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ভুট্টা ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন।
আব্দুল মজিদ বলেন, অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ভুট্টা শুকিয়ে মজুদ করে রাখেন। বাজারে চাহিদা ও দাম বাড়লে ভুট্টা বিক্রি করে তারা লাভবান হন। এভাবে ভুট্টা মজুদ রেখে ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা উভয়ে প্রতিবছর লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতিবছর এ জেলায় ভুট্টার চাষ বেড়েই চলছে। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৭৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদনও হয়েছে ভালো।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, গত কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় চাষিরা ভুট্টা চাষ করেছে। আগাম জাতের ভুট্টা পেকেছে। কৃষকেরা তাদের ক্ষেতের ভুট্টা উত্তোলন ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু করেছে। ভালো ফলনের আশায় তারা এবার উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন।
বিরল উপজেলার ধুকুরঝারি গ্রামের ভুট্টা চাষি নুরুল ইসলাম জানান, প্রথমে ভুট্টা চাষের জমিতে ২০ কেজি পটাস, ২৫ কেজি ফসফেট, ১০ কেজি জিপ সার, ১ কেজি বরণ, ১ কেজি দানাদার ও ১ কেজি সালফার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমি তৈরি করেন চাষিরা। পরে বিঘা প্রতি ৩ কেজি ভুট্টার বীজ রোপণ করেন। এক মাসের মাথায় আইল বেঁধে বিঘা-প্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ড্যাব ও ২ কেজি থিওভিট ছিটিয়ে ক্ষেতে পানি সেচ দেয়া হয়। বীজ রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ভুট্টা কাটা ও মাড়াই করা হয়।
ভুট্টার বীজ রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়।
জেলার ১৩টি উপজেলায় ভুট্টার অধিক ফলন হয়েছে। আধুনিক হারভেস্ট ভুট্টা মাড়াই মেশিন এর সাহায্যে অল্প খরচে ভুট্টা মাড়াই করতে পারছেন। সেই সাথে ভুট্টা বিক্রিতেও কোন ঝামেলা নেই। কাঁচা ভুট্টা ক্ষেত থেকে পাইকারেরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরাও খুব আনন্দিত।