শিরোনাম
।। দিলরুবা খাতুন ।।
মেহেরপুর, ১৯ মে ২০২৫ (বাসস) : বাড়ির আঙিনায় আঙুর চাষ করে সফল কৃষি উদ্যোক্তা শরিফুল-মিম দম্পতি। তাদের সাফল্য সাড়া ফেলেছে শিবপুর গ্রামে। বাড়ির আঙিনায় গাছে গাছে সবুজ আঙুর শরিফুল-মিম দম্পতিকে যেন সুদিনের বার্তা দিচ্ছে। আর এই সুদিন দেখে আঙুর চাষে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন গ্রামের অনেকেই।
জেলার মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম (৩৭) ও সারমীন আক্তার মিম দম্পতি।
পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় ৭ কাঠা জমির ওপর আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন। জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য না জেনে ইউটিউব দেখেই আঙুর চাষে আগ্রহী হন এই দম্পতি। প্রথমে গাছ সংগ্রহ করে ইউটিউব দেখে নিয়মকানুন জেনে বাড়ির আঙ্গিনায় ৭ কাঠা জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। এসময় পরিবার ও আশপাশের অনেকেই তাদের নিরুৎসাহিত করেছে। তবে তারা থেমে যাননি। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক চাষেই গাছ থেকে পেয়েছেন পর্যাপ্ত মিষ্টি আঙুর। শরিফুলের সংগ্রহে থাকা তিনটি জাতের পাশাপাশি ভারত থেকে আরও কয়েকটি জাত সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে শরিফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বসতবাড়িতে ঢোকার মুখেই আঙুর গাছের মাচা। মাচাটি তিনি বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে তৈরি করেছেন। মাচার দিকে তাকালেই চোখে পড়ে গাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। বাগান দেখতে স্থানীয়রা ভিড় জমাচ্ছেন। গাছের পরিচর্যা করছেন শরিফুল ইসলাম ও স্ত্রী মিম। তাদের মুখে চওড়া হাসি। তাদের দেখে গ্রামের অনেকেই এখন সবুজ রঙের রাশিয়ান মিষ্টি জাতের গোল আঙুর চাষের পরিকল্পনা করছেন ।
শরিফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ছোটবেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বাম হাতে আঘাত লাগে। স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় পরবর্তীতে একটি হাত কেটে ফেলতে হয়। এজন্য আমি ভারি কোন কাজ করতে পারি না। একটি হাত না থাকায় অনেকে কাজেও নেন না। ছোট একটা ব্যবসা ছিল তাতেও কোন লাভ হয়নি। তাই অভাবের সংসারে বসে না থেকে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, প্রায় ২ বছর আগে এক ছোট ভাই একটি আঙুরের চারা এনে দেয় বাড়িতে রোপণের জন্য। সেই গাছে পর্যাপ্ত ফল আসে এবং ফল অত্যন্ত মিষ্টি হয়। সেই থেকে আমার ইচ্ছে ছিল মিষ্টি আঙুর চাষ করার। তখন ইউটিউবে অস্ট্রেলিয়ার একটি আঙুরের বাগানের ভিডিও দেখেছিলাম। তখন থেকে মিষ্টি আঙুরের চারা খুঁজতে থাকি। গত দেড় বছর আগে আমার ওই ভাইয়ের মাধ্যমে ভারতে যোগাযোগ করে সেখান থেকে আরো ৮টি চারা নিয়ে এসে বাড়িতে লাগাই। চারা লাগানোর সাত মাসের মধ্যেই আমি ফলন পাই। ওই গাছে পর্যাপ্ত আঙুর ধরে এবং ফল খুব মিষ্টি। তখন থেকেই আমি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করার পরিকল্পনা করি। বর্তমানে আমি বাড়ির আঙিনার সাত কাঠা জমিতে আঙুর চাষ করেছি।
তিনি জানান, ভারত থেকে অন্যান্য জাতের আঙুরের চারার অর্ডার দিয়েছেন। বর্তমানে তার বাগানে তিন জাতের মোট ৯০টি গাছ আছে। এরমধ্যে ৩৪ টি গাছে ফল এসেছে। ২২ হাজার টাকা ব্যয় করে বর্তমানে যে পরিমাণ আঙুর গাছে আছে সবকিছু ঠিক থাকলে ১৫ থেকে ২০ মণ ফল বিক্রি হবে। এই আঙুর বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শরিফুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার মিম বলেন, দেশের মাটিতে অনেক ধরনের বিদেশি ফল চাষ হয়। তাই দেখে আঙুরও চাষ হতে পারে এটা মাথায় আসে। আমরা ইউটিউব দেখে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছি।
শরিফুলের বন্ধু রাশেদ ও প্রতিবেশী জাহিদ বলেন, আমরা জানতাম আঙুর বিদেশি ফল। কিন্তু আমাদের দেশের মাটিতেই আঙুর চাষ হচ্ছে। শরিফুলের দেখাদেখি আমরাও আঙুর চাষের কথা ভাবছি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বাসসকে বলেন, শিবপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম পরীক্ষামূলকভাবে তার বাড়ির আঙিনায় আঙুর চাষ করেছে। সব দিক বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে মেহেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।