শিরোনাম
দেলোয়ার হোসেন আকাইদ
কুমিল্লা, ১২ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় এবার চাহিদার চেয়ে ২৩ হাজার ১৬৬টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। এতে জেলার ১৭টি উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে।
এবার ভারতীয় গরু প্রবেশে প্রশাসনের কঠোরতা ও নানা পদক্ষেপে খুশি খামারিরা। ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ না করলে, হাটে ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা তাদের।
কুমিল্লায় এবার কোরবানির বাজারে ভালো দামের আশায় শেষ সময়ে পশুর যত্ন-পরিচর্যা বাড়িয়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা। অনেক খামারি ইতোমধ্যেই গরু বিক্রি শুরু করেছেন।
চাহিদার তুলনায় বেশি পশু পালন করায় খামারি-গৃহস্থরা জেলার বাইরে বিক্রি করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত পশু অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যাবে বলে জানান তারা।
গো-খাদ্যের দাম সহনীয় হওয়ায়, পশুর দাম তেমন বাড়বে না বলে জানান অনেক খামারি। এ কারণে কোরবানির পশুর দামও ক্রেতার নাগালের মধ্যেই থাকবে বলে আশা তাদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলায় কোরবানির জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে এবারে কোরবানির চাহিদা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি।
জেলায় এবার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। কোরবানির জন্য মোট গরু ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২টি, মহিষ রয়েছে ৬০৮টি, ছাগল রয়েছে ৫৬ হাজার ৯৪০টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫টি ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি।
জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৬৩ টি পশু, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৯৯টি, বরুড়া উপজেলায় ২৩ হাজার ১২টি, লাকসাম উপজেলায় ৩৩ হাজার ৮৬৭ টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ২৭ হাজার ১৭৪ টি, চান্দিনা উপজেলায় ১৫ হাজার ২১০টি, দাউদকান্দি উপজেলায় ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বার উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৪২টি, মুরাদনগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচং উপজেলায় ৯ হাজার ৬৬৪টি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় আট হাজার ৭৬৪টি, হোমনা উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনা উপজেলায় আট হাজার ৭২৭টি, তিতাস উপজেলায় ছয় হাজার ৮৭১টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৯ হাজার ৬৪৯টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ৯১১টি ও লালমাই উপজেলায় ১৯ হাজার ২৩৮টি কোরবানির পশু রয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত কেরবানীর পশু রয়েছে।
নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার নূর জাহান এগ্রোর মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে ৫৮টি গরু পালন করেছি। এর মধ্যে ১০টি কোরবানির জন্য বিক্রি করেছি। গেল বছরের চেয়ে এবার দাম তেমন বাড়েনি। গরুর খাদ্যের দাম সহনীয় থাকায় গরুর তেমন বেশি দাম রাখছি না।’
তিনি বলেন, ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু আসার শংকা এবার নেই। তাই আমরা খামারিরা এবার অনেকটা স্বস্তিতে আছি।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আগানগর বড়হাতুয়া এলাকায় অবস্থিত হানিফ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. আবু হানিফ বলেন, আমরা একটি বছর পশু পালন করে লাভের স্বপ্ন দেখি আর চোরাইভাবে পশু এসে প্রতিবারই আমাদের সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দেয়। এবার অবৈধভাবে পশু প্রবেশ বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এবার আমরা অনেকটা লাভের আশাবাদী।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বাসস-কে বলেন, এবার কুমিল্লায় কুরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু রয়েছে, ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কারো কোন চিন্তা করতে হবে না। এছাড়া ঢাকা চট্টগ্রামের মাঝামাঝির জেলা হিসেবে কুমিল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। ফলে এই উদ্বুদ্ধ পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও বিক্রি করে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকেও এ জেলায় কোরবানির পশু আসে। সব মিলিয়ে কুরবানির পশুর সংকট হবে না। দেশের গরু দিয়ে সব কুরবানি হবে।
তিনি বলেন, কুমিল্লা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারত থেকে অবৈধভাবে যাতে কোন পশু আসতে না পারে সেজন্য আমরা বিজিবি, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল সংস্থা’র সঙ্গে সমন্বয় করছি। আশা করি আমাদের কঠোর নজরদারির কারণে ওই পাড়ের পশু আমাদের দেশে আসতে পারবে না।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বাসস-কে বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। এই ঈদে অবৈধ পথে ভারত থেকে যাতে দেশে পশু আসতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছি। কুরবানির পশুবাহীর ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হতে হয়, সেদিন আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। গেল ঈদের মত এবারও শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ঈদ উদযাপন করবে।
কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বাসস-কে বলেন, ভারতীয় গরু প্রবেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন গরু একবারে আসছে না বললেই চলে। জেলার বেশিরভাগ সীমান্ত কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। যে অংশগুলোতে এখনও বেড়া দেওয়া হয়নি, সেখানে আমরা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বাড়তি নজরদারিতে রাখছি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।