শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারতের মণিপুর রাজ্যের একটি ভিডিওকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠীর দাবি করে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা মিথ্যা বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ফ্যাক্টচেক টিমের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়েছে,পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়, ভিডিওটি ভারতের মণিপুরের।
রিউমার স্ক্যানার কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর বিরোধ সংক্রান্ত ভিডিও’কে পার্বত্য চট্টগ্রামের বলে প্রচার করার বিষয়টি সম্প্রতি শনাক্ত হয়েছে।
ভিডিওটিতে সামরিক পোশাক পরা কিছু সশস্ত্র ব্যক্তিকে দেখা যায়।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘আলোচিত ভিডিওটি পার্বত্য চট্টগ্রামের নয় বরং, ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর বিরোধ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৬ মিনিটে ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের বাসিন্দা ওথাংজাম চিংচাংগাপা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।’
ওই পোস্টের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে ইশিতা অংগমের নামের আরেকটি ভারতীয় ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও একই ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির মেইতেই ভাষার ক্যাপশন অনুবাদ করে জানা যায়, সেখানে লেখা হয়েছে, ‘যদি কুকি মিলিট্যান্টরা আক্রমণ চালায়, তাহলে আমরা মেইতেইরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’ ইশিতা অংগমের ফেসবুক প্রোফাইল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেখান থেকে নিয়মিতভাবে মণিপুরের মেইতেই গোষ্ঠীর পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট করা হয়।
এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয়, এটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর বিরোধ-সংক্রান্ত ভিডিও।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (আইডাব্লিউজিআইএ)-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩ মে। ওই দিন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুর (এটিএসইউএম) তফশিলি উপজাতির তালিকায় মেইতেইদের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ দ্রুত পাঠানোর বিষয়ে আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মিছিল করে। মিছিলের পরই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আদালতের ১৯ এপ্রিলের আদেশে রাজ্য সরকারকে বলা হয়, ২০১৩ সালের একটি চিঠির জবাবে চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীদের দাবিদাওয়া যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে রাজ্যের অবস্থান জানাতে। প্রায় একদশক ধরে ঝুলে থাকা এই মামলার রায়ই সংঘাতের সূচনা করে। ২০২৩ সালের ৪ মে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
ফ্যাক্টচেক অনুসন্ধান টিম জানায়, ভারতের মণিপুর রাজ্যের একটি ভিডিওকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
শুধু এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।