শিরোনাম
ঢাকা, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশ সিঙ্গাপুরে মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে শনিবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন দেশটির নাগরিকরা।
সাড়ে ছয় দশক ধরে একচেটিয়াভাবে ক্ষমতায় থাকা পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) এবারও নিরঙ্কুশ জয় পাবে বলেই সবার ধারণা। তবে পিএপি’র প্রার্থী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং পুনরুজ্জীবিত বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট যাচাইয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন।
সিঙ্গাপুর থেকে এএফপি জানায়, ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) ভিন্নমত দমন করে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারা সহজেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়ং দুপুরে সাদা পোশাক পরে সস্ত্রীক একটি ভোটকেন্দ্রে যান। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলেই চলে যান।
সিঙ্গাপুরের কোভিড টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে জনপ্রিয় হওয়া ওয়ং গত বছর তার পূর্বসূরি লি সিয়েন লুংয়ের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেওয়া লি সিয়েন লুং ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ’র পুত্র।
ওয়ং বারবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের প্রভাবে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাণিজ্য-নির্ভর সিঙ্গাপুরকে এগিয়ে নিতে তার একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট প্রয়োজন।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি তার ঘোষিত শুল্ক নিয়ে এগিয়ে যান, চীন ব্যতীত বেশিরভাগ দেশের জন্য তা স্থগিত করেন এবং তাদের প্রভাব মোকাবিলায় উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকতে হয়, তাহলে সিঙ্গাপুর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ওয়ং বলেন, তাই আমি সমস্ত সিঙ্গাপুরবাসীকে বলছি, দয়া করে সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। এটি কোনো জুয়া নয়। এটি আপনার পরিবার, আপনার ভবিষ্যৎ এবং আমাদের সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
তরুণ ও উদ্দীপ্ত প্রার্থী
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাইদিয়া এনজিও বলেন, পিএপি’কে দীর্ঘদিন ধরেই সিঙ্গাপুরের সংকট মোকাবিলায় শক্তিশালী হাত হিসেবে দেখা হয়েছে। সাম্প্রতিক শুল্ক অস্থিরতা ভোটারদের জন্য বড় কোনা বিষয় হয়ে না-ও উঠতে পারে।
তিনি এএফপি’কে বলেন, সিঙ্গাপুরের সাধারণ নির্বাচন স্থানীয় বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে ভূ-রাজনীতি ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা কম। তবে তা সিঙ্গাপুরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয়, চাকরির নিরাপত্তা বা বৃহত্তর অর্থনীতির ওপর সরাসরি ও স্পষ্ট প্রভাব ফেললে ভিন্ন কথা।
২৫ বছর বয়সী ভোটার মুহাম্মদ নাজরি বিন হাদরি জানান, সিঙ্গাপুরে একটি বাড়ির মালিক হওয়া তার জন্য ‘খুব কঠিন’। নিজের জন্য একটি বাড়ির স্বপ্ন দেখা নাজরি ভোট দেওয়ার পর বলেন, ‘আশা করি আবাসন নীতিতে কিছু পরিবর্তন আসবে।’
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সিঙ্গাপুরের এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় পিএপি দীর্ঘদিন যাবত অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সেখানে বিরোধী দল ও এর সমর্থকদের কয়েকটি আসন অর্জনকেই একটি উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসাবে দেখা হয়।
কিন্তু সোচ্চার ভোটারদের কারণে পিএপি’র এ আধিপত্য ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা বিকল্প রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর হিসেবে বেড়ে উঠছেন।
একটি সংবাদমাধ্যমের সাবেক সম্পাদক ও প্রবীণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক পি.এন. বালজি বলেন, কিছু ওয়ার্ডে তরুণ ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বয়স্ক ভোটারদের বিপরীতে তারা উভয় পক্ষের কথা শুনতে এবং একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।
৪০ বছর বয়সী ভোটার শি’আই লিয়াং জানান, তিনি রাজনৈতিক বর্ণচ্ছটা থেকে ‘তরুণ ও উদ্দীপ্ত’ নতুন প্রার্থীদের দ্বারা মুগ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা নির্বাচিত হোক বা না হোক, আমি আশা করি তাদেরকে আমরা সামনে আরও দেখতে পাব, শুনতে পাব এবং তাদের আরও ভালোভাবে জানতে পারব।
বিরোধী দলের সমাবেশে জনতার ভিড়
২০২০ সালে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি (ডব্লিওপি) ৯৩টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জয়লাভ করে ঐতিহাসিক এক সাফল্য অর্জন করে। আগে তাদের আসন ছিল মাত্র চারটি।
রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা ডব্লিওপি একজন বড় আইনজীবীসহ প্রতিভাবান প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তাদের মধ্যে আরও আশা জাগছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় দলটি ঠিক আগের নির্বাচনের মতোই তাদের সমাবেশে বিশাল জনসমাগম করেছিল। কিন্তু অতীতে এই বিশাল সংখ্যা খুব কমই নির্বাচনী জয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পণ্য ও পরিষেবা কর বৃদ্ধির কারণে ডব্লিওপি’র প্রার্থীরা সরকারের সমালোচনা করেছেন। তারাজোর দিয়ে বলেছেন, সরকার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে থাকা সিঙ্গাপুরের ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমাতে যথেষ্ঠ কাজ করেনি।
তারা আরও বলেছেন, পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আরও সদস্যের প্রয়োজন, যাতে পিএপি ‘ফাঁকা মাঠ’ না পায় এবং তাদের জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়।
পিএপি নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান খরচ সামলানোর জন্য সহায়তা করতে কোটি কোটি সিঙ্গাপুর ডলার ব্যয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে, যার মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ ও মুদি দোকানের ভাউচারও অন্তর্ভুক্ত।
সিঙ্গাপুরে প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ ভোটার রয়েছে, যারা ৯৭ জন পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত করবেন। নির্বাচন কর্মকর্তারা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দুপুরের খাবারের আগে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা ১২ ঘণ্টা চলবে। কিছু ফলাফল মধ্যরাতে প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।