শিরোনাম
বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ৩ মে ২০২৫ (বাসস): ভুট্টা এখন এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সরকারি সহায়তার ফলে চলতি মৌসুমে জেলা জুড়ে ভুট্টার অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে মাথা উঁচু করে নিজেদের প্রাচুর্যের কথাই যেন ঘোষণা করছে ভুট্টার কচি শিষ ও সবুজ পাতারা। তাই দেখে কৃষকদের চোখেও খুশির ঝিলিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলা ছাড়াও তিস্তার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। এক সময় যেসব জমিতে আগাছা ছাড়া কিছুই হতো না, সেসব অনাবাদি ও পরিত্যক্ত জমিতেও এখন দুলছে সবুজ ভুট্টার গাছ।
জানা যায়, ভুট্টা চাষে খরচ তুলনামূলক কম ও ফলন বেশি। পাশাপাশি বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো থাকায় কৃষকদের মধ্যে এই ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে গবাদিপশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যাপক ব্যবহার থাকায় বছরজুড়েই এর চাহিদা থাকে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর লালমনিরহাট জেলায় দুই মৌসুমে ৩৯ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪৬,৮৫৫ মেট্রিক টন। বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ ও আগাছা দমন এবং ৫০-৫৫ ও ৭০-৭৫ দিনের মাথায় আরও দুটি হালকা সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া, ভুট্টায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলক কম।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চাষি ওসমান গনি (৫২) বাসসকে বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৫-১৮ হাজার টাকা। বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা ১১’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ফলে বিঘা প্রতি ১৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব।’
তিস্তা পাড়ের কৃষক আলমগীর মিয়া (৪৫) বলেন, ‘ভুট্টা গাছের সব কিছুই কাজে লাগে। পাতা গবাদিপশুর খাদ্য, আর ডাঁটা ও মোচা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করি। দাম ও চাহিদা ভালো থাকলে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করব।’
বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাকিম (৫৫) বলেন, ‘ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় এবারও দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি, ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাব।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং চাষে সব ধরণের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, ‘লালমনিরহাটে এখন ভুট্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে এবং সাফল্য ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’