শিরোনাম
দিনাজপুর ২ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মুরারীপুর গ্রামের খামারিরা।
কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার পছন্দের তালিকায় থাকে দেশি গরু। দেশি গরুর চাহিদা মেটাতে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারীপুর গ্রামের প্রতিটি পরিবারে গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এসব গরু সুস্থ-সবল রাখতে ব্যস্ততা বেড়েছে মুরারীপুর গ্রামের গরু খামারিদের। এই গ্রামের ভিন্নতা হল, কম-বেশি সবার বাড়িতে একটি করে গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির খামারিদের সর্বনিম্ন ৩টি থেকে সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত গরু আছে।
এসব গরু স্থানীয় হাটের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। বিশেষ করে কোরবানি ঈদে গরু বিক্রির ধুম পড়ে এই গ্রামে। কে কত টাকার গরু বিক্রি করল এই নিয়ে চলে গ্রামবাসী খামারিদের মধ্য প্রতিযোগিতা।
বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পশু চিকিৎসক সুনীল কুমার রায় জানায়, জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে ২০১৯ ও ২০২০ অর্থবছরে বীরগঞ্জ প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়নে ২০ জন খামারিকে গরু মোটা-তাজা করণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গরু খামারিরা নিজের উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে এক-দু’টা গরু দিয়ে নিজের বাড়িতে গরু মোটা-তাজা করণ খামার শুরু করেন।
বর্তমানে মুরারীপুর গ্রামের ৯৫ ভাগ বাড়িতে গরু মোটা-তাজা করণ খামার তৈরি করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের।
খামারিদের বেশির ভাগই গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গরুর যে কোনো সমস্যায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সহযোগিতা পান বলে জানায় ওই গ্রামের খামারিরা।
মুরারীপুর গ্রামের শাহাপাড়ার গরু খামারি শামিম হোসেন বলেন, ‘২০২০ সালে বাবার দেওয়া ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটা গরুর বাছুর দিয়ে গরুর খামারের যাত্রা শুরু করেছি। এখন আমার খামারে বিদেশি জাতের ১০টি গরু আছে। যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো। আর দেশীয় জাতের ২০টি ষাড় আছে। এসব গরু কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরুর খামার করেই আজ আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।
মুরারীপুর গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, জেলা প্রাণি সম্পদ ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় আমরা গরুর খামার করতে সক্ষম হয়েছি। আজ আমরা কম বেশি সবাই গরুর খামার দিয়েই সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, গরুর খামার হিসেবে ধরতে গেলে মুরারীপুর গ্রাম দেশের মধ্যে একটি মডেল গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর ভেটেনারি সার্জন ডা. আশিকা আখতার তৃষ্ণা জানায়, এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে, আড়িয়া গরু ৫৩ হাজার ৫১৪টি, বলদ গরু ৩৪ হাজার ৫৩৫টি, গাভী ২৯ হাজার ৩৮৩টি, মহিষ ৭ হাজার ২৬৩ টি। মোট ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৫ হাজার পশু।
অপরদিকে ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৬৮ হাজার ২৪২টি আর ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে ৩ হাজার ৭টি।
জেলায় ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে মাত্র ৩৭ হাজার। অতিরিক্ত কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মুহিববুর রহমান বলেন, ‘মুরারীপুর গ্রামের মানুষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রচেষ্টায় আজকে ওই গ্রামের প্রায় সকল মানুষই গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা চাই পুরো উপজেলায় এ রকম খামার ছড়িয়ে দিতে। যাতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অন্যের কাছে যেতে না হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.আব্দুর রহিম জানান, সারা দেশের মধ্যে এমন কোন গ্রাম আছে বলে মনে হয় না। যেখানে সবাই গরুর খামার করেছে। খামারি ও আমাদের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এই গ্রামের মত যদি সারা দেশে গরু মোটা-তাজা করণ খামার তৈরি করা যেতো, তাহলে একদিকে যেমন,গরুর মাংসের ঘাটতি মিটতো, অপর দিকে দেশে আর বেকার সমস্যা থাকতো না । কোরবানি ঈদে জেলার বেশির ভাগ গরুর চাহিদা এই গ্রামের খামারিরা পূরণ করেন বলে তিনি ব্যক্ত করেন।