বাসস
  ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১২:৫৬

ঠাকুরগাঁওয়ে বারোমাসি তরমুজ চাষে কলেজ ছাত্র উজ্জ্বলের সাফল্য

॥ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ॥
ঠাকুরগাঁও, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ (বাসস) : জেলার হরিপুর উপজেলার উজ্জ্বল হাসান রাজভীর লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে এক বিঘা জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ করে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। 
মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে স্বল্প সময়ে ব্ল্যাক বেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন বিদেশী দুটি জাতের তরমুজের ফলনও হয়েছে ভালে। তার এই তরমুজ ক্ষেত দেখে তরমুজ আবাদে আগ্রহী হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 
উজ্জ্বল হাসান রাজভীর হরিপুর উপজেলার, হরিপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে । সে  ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের তৃতীয় ছাত্র। 
করোনায় পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেই সময় থেকে কাজ শুরু করে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র উজ্জ্বল উপজেলার কারীগাঁও  গ্রামে উদ্যোগ নেয় বিদেশী জাতের তরমুজ চাষে। তার এই তরমুজ ক্ষেত দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ও তরমুজ আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তার পাশাপাশি কৃষি অফিসের পরামর্শ ও ইউনাইটেড সিড কোম্পানির সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করে বিদেশী জাতের ব্ল্যাক বেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের। নিয়মিত পরিচর্চা ও পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে এই দুই জাতের তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়ে বাজার জাত করতে পারবেন এই তরমুজ।
 মালচিং প্রদ্ধুতিতে তরমুজ চাষ করা মাচায় গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাক বেবি রঙ- বেরংয়ের তরমুজ। তার তরমুজ আবাদ দেখে স্থানীয়রা যেমন উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তেমনি কর্মসংস্থানের জায়গা হয়েছে অনেকের।
উজ্জ্বল হাসান রাজভীর বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় আমার মনে হয়েছে কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হতাম তাহলে ভালো হতো তাই ভেবে আমি তরমুজ আবাদ শুরু করি। 
এক বিঘা জমিতে আবাদে খরচ হয়েছে আমার ৫০’হাজার টাকা। গত একবছরে ২ বার ফলন হয়। ফল বেচে প্রায় দেড়-দুই লাখ টাকা পাওয়া গেছে। একবিঘা জমি বাৎসরিক ভাড়াতে নিয়ে এবারও আবার আরো এই দুই জাতের তরমুজ করেছি দুই বিঘা জমিতে। এবার আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এবারে ৪-৫ লাখ টাকার ফসল বিক্রির আশা করছি। আশা করি ভালো লাভ হবে। এবারে ভালো লাভ হলেন একেবারে বাণিজ্যিক আকারে বড় পরিসরে এই তরমুজ চাষ শুরু করবো। এই তরমুজ বারোমাসি ফলন বীজ হওয়ায় সব সময় এই তরমুজ করা যায়। আর লাভবান হওয়ায় এলাকার অনেকে আমাকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এই তরমুজ চাষে। এতে একদিকে যেমন আমার কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় কিছু শ্রমিক ও কৃষকদেরও কর্মসংস্থান করতে পেরেছি আমি বলেও আনন্দের সাথে জানান তিনি। 
এ প্রসঙ্গে একই এলাকার স্থানীয় অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্র রমজান আলী জানায়, উজ্জ্বল হাসান রাজভীর ভাইয়ের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বেকার বসে না থেকে আমিও কৃষিতে যুক্ত হবার ও বারো মাসি তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাবার জমি থাকায় এ বিঘা জমিতে পরীক্ষামুলক এই নতুন জাতের তরমুজ করবো এবার। আমি শুধু নয়, উজ্জ্বল হাসান রাজভীর ভাইয়ের দেখে অনেক ছাত্র এমনকি শিক্ষকরাও এই কৃষি করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। 
হরিপুর জেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের ভুতপাড়া এলাকার কৃষক মোবারক আলী জানান, আমরা জানতামই না যে তরমুজ বারোমাসি হয়, নতুন জাতের তরমুজ এনে চাষ করে নিজে লাভবান হয়ে ভালো সাড়া ফেলেছে উজ্জল। অনেক ছাত্র এমনকি কৃষকরাও তার কাছে এ বারোমাসি তরমুজ চাষের বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ নিতে আসছে। 
এ বিষয়ে হরিপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা গুলজার রহমান বলেন, আমাদের হরিপুর উপজেলা ঠাকুরগাঁওয়ের একটি প্রত্যন্ত এলাকা এই এলাকায় খুব উচ্চমূল্য ফসল তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে এই ফলন আমরা ঘরে তুলতে পারবো। আর বারো মাসি হওয়ায় বছরের দুই তিনবার করা যায়। এবার হরিপুর উপজেলায় এক হতে দুই হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে ফলনও ভালো হয়েছে কৃষকরা বেশ লাভবান হবে বলে আশা করছি। আর স্থানীয় বা উপজেলা কৃষি বিভাগ তাকে সবৃাতœক সহযোগিতা করছে ও করবে বলেও জানান তিনি। 
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হাসান বলেন, এ অঞ্চলে এমনিতেই অনেক ফল, ফসল ও সবজি বারোমাসি হয়। এই বারোমাসি তরমুজ ফল অনেক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এটা আবাদ করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। দেশের এমন শিক্ষিত বেকার যুবকরা কৃষিতে বা বাণিজ্যিক কৃষিতে আসলে বা ঝুঁকলে কৃষি ও কৃষক সবই উপকৃত হবে। এই কাজের ফলে কৃষিতে উন্নতির উজ্জ্বল হাসান রাজভীর নতুন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়