জয়পুরহাট, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ (বাসস) ঃ ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ধুমধামে মাঠ ঘাটে সোনালী রং ধারণ করা রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। নতুন ধান কাটা মাড়াই উৎসবের পাশাপাশি চলছে ক্ষির, শীতের পিঠা পুলি খাওয়ার আয়োজন। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার সর্বত্র এখন কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আমন ধান লাগানোর পরে তেমন কাজ থাকতো না কৃষক ও মজুরদের হাতে। ফলে আশ্বিন-কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে কাজের অভাবে মঙ্গা হিসেবে দেখা দিতো জয়পুরহাটের মানুষের কাছে। চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতো দৈনন্দিন খরচ চালাতে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সরকারের সহযোগিতায় উদ্ভাবন করা হয় ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ বিনা-৭, ১৭, ব্রি ধান-৭৫, এ্যারাইজ-৭০০৬, জিরা শাইল, গুটিস্বর্ণা ও কাটারী ভোগ জাতের আমন ধান। এছাড়াও স্থানীয় মামুন ও রনজিত, পটল পাইরী, চয়ন জাতের ধান স্বল্প সময়ে অল্প খরচে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে। সে কারণে সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে চিরতরে মঙ্গা দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচির আওতায় প্রায় বছর ব্যাপী ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, হত দরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি হিসেবে ১০ টাকা কেজি চাল ও ওএমএস সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। ফলে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ ও বিনা-৭, ১৭, এ্যারইজ-৭০০৬ জাতের আমন ধান আগাম জাত হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২০২১ রোপা আমন চাষ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফশী ৬১ হাজার ৮১২ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের রয়েছে ৬০০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন । জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিএডিসি থেকে উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহ করা হয়। আলু চাষের জন্য এ জেলার কৃষকরা বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে থাকেন।
পঁচিবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের কাঁশড়া গ্রামের কৃষক আবু তালেব এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার ১৮ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭, ১৭ ও ধানীগোল্ড জাতের ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন, বরইতলী গ্রামের কৃষক আলিম উদ্দিন এবার ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ২০/২২ মণ করে ধান পেয়ে খুশি বলে জানান। নতুন ধান বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। প্রকার ভেদে সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৮ শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় এবার রোপা আমন চাষে জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিস নিবিড়ভাবে মনিটরিং করে। জেলায় এবার বীজ ও সারের কোন সঙ্কট ছিল না তবে রোপা আমনের চারা লাগানোর সময় আকাশের বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দিতে হয়। এতে ফলনের কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম । রোপা আমন চাষে এবারও জেলার কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।