শিরোনাম
লক্ষ্মীপুর, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলায় অতিভারী বর্ষণ, মেঘনা নদীর তীব্র জোয়ার ও নোয়াখালী থেকে আসা বানের পানিতে নিম্নাঞ্চল ডুবে প্রায় ১৮ হাজর ৩৬৫ টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করতে প্রায় ১২৬ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এসব ঘর মেরামত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পরিবার গুলো ঘর মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করতেও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা৷
তারা জানান, কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট থেকে বন্যার পানি কমলেও অনেক নিম্নাঞ্চলে বাড়িঘর এখনও পানিতে ডুবে আছে। যতক্ষণ পানির নীচে থাকবে ঘর, তত ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। এদিকে কাঁচাঘরের ভিটির মাটি সরে গেলেও নতুন মাটি দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তাছাড়া ঘর মেরামতের অর্থও নেই অনেকের কাছে।
জেলা সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বটতলী গ্রামের আবদুর রশিদ বেপারী বাড়ির মৃত তোফায়েল আহমেদের ছেলে বেল্লাল হোসেন বলেন, আমার ঘরের ভিতরে এখনও হাঁটু পরিমাণ পানি আছে। ঘরের খুঁটি গুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, টিনগুলো নষ্ট হচ্ছে, ঘরের ভিতরে কোমর পরিমাণ পানি ছিলো। তাই এক প্রতিবন্ধী মেয়েসহ পরিবার পরিজনকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। বন্যার পানিতে ঘরের অবস্থা এমন হয়েছে যে- বসবাসের মতো নেই। মেরামত করা ছাড়া ঘরে যাওয়া যাবে না। আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা বেতনে নাইট গার্ডের চাকরি করতাম, বন্যার কারণে চাকরি নেই, তাই খুব কষ্টে আছি। ঘরে তো যেতে হবে, আশ্রয় কেন্দ্রে আর কতদিন থাকবো। সরকারি সহায়তা ছাড়া ঘর মেরামত করার কোন উপায় আমার নেই।
একই এলাকার মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. সুমন বলেন, আমি একজন রিকশা চালক বন্যার কারণে গত এক মাস পর্যন্ত বেকার। এর মধ্যে ঘরে ছিলো কোমর পরিমান পানি বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজনে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। এর মধ্যে ঘরের অবস্থা খুব খারাপ পড়ে যেতে পারে। ভিটার মাটি পর্যন্ত সরে গেছে। কোন সহযোগিতা ছাড়া এ ঘর ঠিক করতে পারবোনা বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম দিঘলী গ্রামের মৃত সফি উল্যার ছেলে কামাল হোসেন বলেন, পানি কমেছে কিন্তু ঘরের অবস্থা একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে গতকাল বাড়িতে এসেছি। ঘর মেরামত করতে হবে। মেরামতের মতো টাকা নেই আমার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য মতে জেলার ৫টি উপজেলায় ঘরবাড়ি (কাঁচা, পাকা আধাপাকা) প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার বসতঘর রয়েছে। এ-র মধ্যে বন্যায় ১৮ হাজার ৩৬৫ টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মেরামত করতে প্রায় ১২৬ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাগবে।
এর মধ্যে সদর উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টি ঘর যা মেরামত করতে ৬২ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাগবে। রায়পুর উপজেলা ১ হাজার ৩০৮ টি ঘর মেরামত করতে ২ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রামগঞ্জ উপজেলা ১ হাজার ৮৮৫ টি ঘর মেরামত করতে লাগবে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রামগতি উপজেলা ১ হাজার ২৯২ টি ঘর মেরামত করতে লাগবে ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। কমলনগর উপজেলার ৬ হাজার ৩৮০ টি ঘর মেরামত করতে ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বাসসকে বলেন, সাম্প্রতি অতিবৃষ্টি, মেঘনা নদীর তীব্র জোয়ারের পানি ও নোয়াখালীর বানের পানিতে নিম্নাঞ্চল ডুবে জেলা ৫টি উপজেলায় ঘরবাড়ি (কাঁচা, পাকা আধাপাকা) ১৮ হাজার ৩৬৫ টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মেরামত করতে প্রায় ১২৬ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাগবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। আমরা জরিপ করে ঘরের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছি।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বাসসকে বলেন, জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে পানি বন্দি হয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। তার মধ্যে এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। এদিকে আশ্রিতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, বন্যায় জেলা জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আশাকরি বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সুষমভাবে বন্টন করা হবে ।