বাসস
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৯

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি: আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে মানুষ বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছে

লক্ষ্মীপুর, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): হজেলায় গত তিনদিনে ভালো  আবহাওয়া বিরাজ করছে, এরসঙ্গে  ছোট বড় খাল গুলোর অবৈধ বাঁধ কেটে, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করায় পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে মানুষ বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছে।
এলাকা ভেদে ২ থেকে ৩ ফুট পানি কমায় স্বস্তি ফিরেছে বানভাসীদের মধ্যে । তবে জেলার ৫টি উপজেলায় এখনও পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে এখনও ১৪ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে।
এদিকে বাড়িঘর থেকে পানি নামতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরেছেন নিজ বাড়িঘরে। তবে সুপেয় পানি ও রান্নাবান্নার কাজ নিয়ে রয়েছেন বিপাকে। কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়া বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে।
জেলা সদরের অধিকাংশ সড়কের পানি নেমে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গুলোতে ছোট বড় খালা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু সড়কে এখনও রয়েছে হাঁটু পরিমাণ পানি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। এদিকে পানি বাহিত রোগ, ডায়রিয়া ও চর্মরোগ ও সর্পদংশন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বন্যায় কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণি সম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসীরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আকতার বলেন, জেলা জুড়ে বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে গত ৩১ আগস্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অস্থায়ী ও টয়লেট স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া যেসমস্ত এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমেছে ও-ই  এলাকায় নলকূপ গুলো জীবাণুমুক্ত কার্যক্রম চলছে।
সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবীর বলেন, বন্যায় পানি বাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২২ আগস্ট থেকে জেলার ৫টি উপজেলা ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও সর্পদংশনসহ অন্যান্য রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আজ পর্যন্ত মোট ২৭১৫ রোগী আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে ১৩৯৮ জন, এ-র মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চর্মরোগ ১০৯৭ জন  এছাড়া সর্পদংশন করেছে ২১৬ জনকে। পানিতে ডুবে ৪ জন আক্রান্ত হয়েছে এ-র মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে ৬৪টি মেডিকেল টিম কাজ করতেছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বাসসকে বলেন, জেলার ৫টি উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমছে। এলাকা ভেদে ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত কমেছে। তবে এখনও প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়েছে আছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে আজ পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্র  গুলোতে এপর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া পানি বন্দিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্বেচ্ছাসেবী, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ও এনজিও গুলো পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বন্যার কারণে বিভিন্ন বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেমন কৃষি বিভাগে ১৯১ কোটি, মৎস্য বিভাগে ২৩৭ কোটি, প্রাণিসম্পদে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে ১২৬ কোটি, ব্রীজ কালভার্টে ১৩ কোটি এবং ঘরবাড়িতে ১২৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে।