বাসস
  ২২ মে ২০২৪, ২০:৫১
আপডেট  : ২২ মে ২০২৪, ২০:৫৩

বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া কৌশলগত সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গভীরতা, মাত্রাকে স্বাগত জানায়

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র নিরাপত্তা হুমকি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার অপরাধ এবং মানব পাচার প্রতিরোধসহ সমসাময়িক অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলির বাস্তব সমাধান খুঁজে বের করতে একত্রে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। 
উভয় দেশ ঢাকা ও ক্যানবেরার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গভীরতা ও মাত্রার প্রশংসা ব্যক্ত করেছে। 
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এসব পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করা হয়। 
বৈঠকে মন্ত্রীরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা, জনসংখ্যাগত স্থিতিস্থাপকতা উন্নীত করা, মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি বাড়ানো এবং দূষণমুক্ত জ্বালানি সরবরাহ চেইনকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন।
তারা এই অঞ্চলে সংঘাতের ঝুঁকি কমাতে যোগাযোগের উন্মুক্ত চ্যানেল জোরদার এবং আত্মবিশ্বাস তৈরির পদক্ষেপের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
মন্ত্রীরা পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত উষ্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আমাদের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। 
তারা স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক পর্যায়ে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় এ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে।
মন্ত্রীরা দ্বিমুখী বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন যখন বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সহজ উত্তরণকে সমর্থন করার জন্য তার বাজারে শুল্ক-মুক্ত, কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 
বাংলাদেশের মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, আইসিটি ও লজিস্টিকসের মতো থ্রাস্ট সেক্টর সহ বিভিন্ন খাতে অস্ট্রেলিয়ান বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
মন্ত্রীরা উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে জোরদার করবে এমন অগ্রাধিকারমূলক কাঠামোগত সংস্কার মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চলমান অর্থায়নের কথা উল্লেখ করেন। মন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বর্ধিত সংযোগের গুরুত্ব উল্লেখ করে, মন্ত্রীরা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অবকাঠামো সংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে সংযোগ ব্যবস্থার জন্য বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সাথে অংশীদারিত্বে অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করেন। 
তারা দ্বিপাক্ষিক এয়ার কানেক্টিভিটি এবং ক্যাবল কানেক্টিভিটি রেজিলিয়েন্স নিয়ে আরও কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
তারা বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আসিয়ান আউটলুকের মধ্যে মিল থাকার উল্লেখ করেছেন।  তারা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ভীতি, হস্তক্ষেপ ও জবরদস্তি থেকে মুক্ত একটি অঞ্চলের দিকে তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মন্ত্রীরা ইন্দো-প্যাসিফিকের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, নৌচলাচল ও ওভার ফ্লাইটের স্বাধীনতা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।  
সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার অপরাধ এবং মানব পাচার প্রতিরোধ সহ সমসাময়িক চ্যালেঞ্জের বাস্তব সমাধানের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 
তারা গাজার ভয়ানক মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অভিন্ন উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা ৭ অক্টোবরের হামলার পরে আরও বেড়েছে। তারা অবিলম্বে মানবিক বিবেচনায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। 
মন্ত্রীরা ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ এবং সারা বিশ্বে এর প্রতিক্রিয়া নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 
তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ও জাতিসংঘের সনদের নীতি অনুসারে সংলাপ ও  কূটনীতির মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। 
মন্ত্রীরা মিয়ানমারের অবনতিশীল সংঘাত পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আসিয়ান ও অন্যান্য প্রধান আঞ্চলিক নেতাদের প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৩ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের মন্ত্রী গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মন্ত্রীরা বাংলাদেশে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৮২ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপ এবং ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অধীনে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষ করেছে।
ইউএনডিপি-এর সাথে কাজ করে, অস্ট্রেলিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি কৌশল তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নীতি সহায়তা প্রদান করেছে।
অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ বিশেষ করে শিক্ষা, সরকার ও সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব সহ সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপক গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।
অস্ট্রেলিয়া নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগের জন্য তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। আঞ্চলিক নেতৃত্বের জন্য সুযোগের সাথে লিঙ্গ সমতাকে একটি অভিন্ন  অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মন্ত্রীরা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা মোকাবেলায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন ব্যবস্থার অর্থায়ন সহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বর্ধিত সহযোগিতার গুরুত্বের বিষয়ে মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চের কাজ সহ কৃষি উৎপাদন ও গবেষণার অভিযোজনে সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সাথে তার অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়েছে।
তারা আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন লাভের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের আসন্ন সফরকে স্বাগত জানিয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে ত্রিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা সহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের দেশগুলির সাথে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত কিছু অভিযোজন সমাধান শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতা স্বীকার করেছে যেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের এবং বাংলাদেশে আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়কে সহায়তা প্রদান করার জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকারের টেকসই মানবিক অবদানকে স্বীকার করেছে।
উভয় মন্ত্রী মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
মন্ত্রীরা সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব ও আইনের শাসন জোদারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসাবে সামুদ্রিক ও মহাসাগরীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
মন্ত্রীরা তাদের উপকূলরক্ষীদের মধ্যে সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার প্রদান সহ সমগ্র অঞ্চলে চোরাচালান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবেলায় সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হন।
তারা বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে সম্মত হয়েছে।
চোরাচালান, মানব পাচার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত বালি প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধী নেটওয়ার্কের হাতে নারী ও শিশু সহ রোহিঙ্গাদের মতো অরক্ষিত মানুষের জীবনহানি ও শোষণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়