বাসস
  ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৩৩

ক্রেতা সংকটে দেশের বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের বাজার বাবুরহাট

নরসিংদী, ৪ এপ্রিল,২০২৪ (বাসস) : ক্রেতা সংকটে ভুগছে দেশের বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের বাজার বাবুরহাট। প্রতি বছরের মতো এই বছরও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রমজানের আগে থেকেই নরসিংদীর (শেখেরচর) বাবুরহাটের দোকানীরা নতুন নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্রেতা সংখ্যা কমে গেছে। বেঁচা-কেনায়ও মন্দাভাব। রমজানের একমাস আগ থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশীয় কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারী এই বাজার পাইকারী ক্রেতায় মুখর থাকার কথা থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার ক্রেতা সংকটে বাবুরহাটের ঈদ বাজার।
নরসিংদীসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপন্ন প্রায় সব ধরণের দেশীয় কাপড় পাওয়া যায় এই বাজারে। ঈদ উপলক্ষে বাজারের ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজার দোকানে নতুন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বকী থাকলেও বাজারে নেই আশানুরূপ বেচাকেনা।
এই হাটকে ঘিরে নরসিংদী জেলাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। সাথে কয়েকশ তাঁত সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী কাপড়ের বাজার নরসিংদীর (শেখেরচর) বাবুরহাট ঘুরে খুব একটা ক্রেতা সমাগম দেখা যায়নি। ক্রেতা সংকটের কারণে অনেকটা অলস সময় পার করতে দেখা যায় দোকানিদের। নেই কুলিদের চিরচেনা সেই হাক-ডাক। শেষ মূহুর্তে এসে দু’একটি দোকানে জাকাতের শাড়ি- লুঙ্গি কেনাবেচা করতে দেখা গেলেও সেটিও ছিল অপ্রতুল।
ব্যবসায়ীরা জানায়, অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। বর্তমানে এই হাটে ৫ হাজারেরও বেশী দোকান রয়েছে। এক সময় কেবল রবিবারেই হাট বসত। বর্তমানে সপ্তাহে ৩ দিন (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) হাট বসে।
 দেশীয় কাপড়ের অন্যতম পাইকারী বাজার বাবুরহাটে শাড়ী, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি কাপড়, শাটিং কাপড়, বিছানা চাদর, পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে গামছাসহ পাওয়া যায় নানা রকমের কাপড়। আর এসব কাপড় আসে স্থানীয় তাঁত ও তাঁত সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। একই সঙ্গে প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানী, কাঁতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড় ও বিক্রি হয় বাবুরহাটে।
তবে এবার অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকায় বাবুরহাটের নেই সেই বাবুগিরি। ডলার সংকটসহ দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতির প্রভাবে কাপড়ের উৎপাদন খরচবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটসহ নানা কারণে এই মন্দাভাব পড়ছে বাবুরহাটে। হ্রাস পেয়েছে বেঁচা-কেনা। রমজানের আগেই প্রতিটি দোকানে বাহারি ডিজাইনের কাপড়ের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এবার ঈদের আগের শেষ হাটে এসেও এখনো পর্যন্ত মজুদের অর্ধেক কাপড় বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ।
বাবুরহাটের ব্যবসায়ী সুশিল চন্দ্র সাহা বাসসকে বলেন, আমরা সারা বছর ঈদ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি।  এই সময় আমাদের কাপড়ের অনেক চাহিদা থাকে। তবে এবার বাজারে আশানুরূপ পাইকার নেই, নেই বেচা-কেনার ধুম। আজ বৃহস্পতিবার ঈদের আগে শেষ হাট। তারপরও আমরা স্টকে থাকা কাপড়ের অর্ধেকও বিক্রি করতে পারিনি। লাভ তো দূরের কথা, মূলধন তুলে আনতে পারব কিনা সেটি নিয়ে শঙ্কায় আছি।
আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমরা সারা বছরই লোকসানে ছিলাম। ঈদ উপলক্ষে লাভের আশা করেছিলাম। কিন্তু বাজারে পাইকার কম থাকায় বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।  লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা জানিনা।
ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আমরা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও আশানুরূপ পাইকার পাচ্ছি না। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। ঈদে বেচাকেনা করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
এদিকে বেচাকেনা না থাকায় অলস সময় পার করছে দোকানের কর্মচারীরা। তারা বলছে, আগে যেখানে সারাদিন ক্রেতায় মুখরিত থাকতো, সেখানে এখন ক্রেতাই পাচ্ছি না। দোকানের কর্মচারী নয়ন মিয়া বলেন, প্রতি ঈদে পাইকারের আগমনে মুখরিত থাকতো দোকান। আমরা দম ফেলার সময় পেতাম না। এখন দোকানে খালি বসে থাকি। যাও কয়েকজন পাইকার আসে, তারা দাম শুনে চলে যায়।
খাগড়াছড়ি থেকে পাইকারি কাপঁড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি কাঁপড়েই ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে আমরা সেরকম কাঁপড় কিনতে পারি নি। তারপরও ঈদে এখানকার কাঁপড়ের চাহিদা থাকায় ৩ লাখ টাকার কাঁপড় কিনেছি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়