বাসস
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫২
আপডেট  : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৫

অর্ধ শতাব্দী পর ফেনী-১ আসনে দৃশ্যপট পরিবর্তনের পথে আওয়ামী লীগ

॥ আরিফ রিজভী ॥
ফেনী, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩(বাসস): জেলার তিন উপজেলা ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী এবং পরশুরামের সমন্বয়ে ফেনী-১ সংসদীয় আসন । স্থানীয় ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে অর্ধ শতাব্দীর খরা দূর করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।এবারের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিজয়ী হয়ে ইতিহাসের পট পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে দেশের স্বাধীনতা ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এ দলটি।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক এবিএম মূসা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর কেটে গেছে ৫০টি বছর। এবার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের পক্ষে গণজোয়ার দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রার্থী নাসিমসহ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম নাম লিখিয়েছেন। তবে, দিন-রাত গ্রাম থেকে গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নাসিম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে এ আসনে অনেক সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের ভাষ্যমতে, ফেনী-১ আসনে দীর্ঘদিন নিজ দলীয় প্রার্থী না থাকায় এ জনপদের আওয়ামী রাজনীতিতে কিছুটা স্থবিরতা নেমে এসেছিল। তবে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন নাসিমকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে নৌকার টিকিট দেওয়ায় নতুন জাগরণের সৃষ্টি লক্ষ্য করা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে, ইতোমধ্যে নির্বাচনে দলের অবস্থান শক্ত করতে গ্রাম থেকে গ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নাসিম। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ফেনী-১ আসনে নৌকায় ভোট চেয়ে ৫০টির বেশি পথসভা করেছেন, নৌকার পক্ষে ৪০টির বেশি উঠান বৈঠক করা হয়েছে। গ্রাম থেকে গ্রামে গিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা প্রচার করছেন নাসিম।
সম্প্রতি, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আলাউদ্দিন নাসিম ইতিহাসের পট পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন। ওই সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, অনেকে বলে থাকেন ফেনী-১ আসন বিএনপির দুর্গ, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, ১৯৯১ সাল ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট ৩৫ শতাংশ হারে সমান-সমান ছিলো। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোটার বিভিন্ন সময় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার কারণে সরকার পরিবর্তন হয়। এ নির্বাচন একটি বিশেষ প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন আমাদের দেশ ও জাতি এবং আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মেয়াদে শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন।
একই সভায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি। ওই সভায় বক্তব্যে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে শেখ হাসিনা একজন যোগ্য প্রার্থী দিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার থাকাকালীন সময় থেকে অদ্যবধি ফেনী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি।
জেলার উত্তরের সীমান্তবর্তী নির্বাচনী এলাকা ফেনী-১ আসন। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই ইতিহাস ঐতিহ্যে জড়িয়ে আছে এ জনপদের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির নাম। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এখানকার সন্তান হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। ১৯৭১-এ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক এবিএম মূসা।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছয়জন। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ৫০ বছরের ভোটের খরা কাটিয়ে এবার ইতিহাসের পরিবর্তন ঘটাবে এমনটিই বলছেন সাধারণ ভোটাররা।  
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অবিভক্ত নোয়াখালীর নোয়াখালী-১ ও পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী এলাকা হিসেবে ফেনী-১ আসন হিসেবে পরিচিতি পায় এ জনপদ। দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১ (পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক এবিএম মূসা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১(পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল ১০ জন। তাদের মধ্যে বিএনপির লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীর বিক্রম সংসদ সদস্য হন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফেনী-১(পরশুরাম- ছাগলনাইয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চারজন প্রার্থী। তখন দল পরিবর্তন করে লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীর বিক্রম জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন লে. কর্নেল জাফর ইমাম, বীর বিক্রম। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন ১০ জন প্রার্থী, বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন।  ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আটজন প্রার্থী। নির্বাচনে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের শিরিন আখতার মশাল প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ নির্বাচনেও জাসদের শিরিন আখতার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়