বাসস
  ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩১

শোক-আর্তনাদ-সিজদায় ঝিনাইদহে বিজয়োল্লাস

’২৪ এর ৫ আগষ্ট ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার বিজয়োল্লাস। ছবি : বাসস

।। শাহজাহান নবীন।।

ঝিনাইদহ, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ৫ আগস্ট ২০২৪। সোমবার। সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। শহর জুড়ে শুনশান নিরবতা। আগের দিন পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাথে ছাত্র-জনতার ত্রিমূখী সংঘর্ষ হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে ৪ আগস্ট পুলিশের সতর্ক অবস্থান থাকলেও ৫ আগস্ট সকালের চিত্র ছিল একদমই ভিন্ন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও চত্বরগুলো ছিল ফাঁকা। ঝিনাইদহ শহর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকূপা শহরেও ছিল শুনশান নিরবতা। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কোনো অবস্থান ছিল না। থানা, পুলিশ লাইনস ও ফাঁড়িগুলোতেই ছিল পুলিশের অবস্থান।

তবে থেমে ছিলনা ছাত্র জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  আহুত অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বান ও ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আঁচ পড়ে ঝিনাইদহ শহরেও। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঝিনাইদহ শহরে প্রবেশ করতে থাকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা। দলমত-নির্বিশেষে গ্রাম-গঞ্জ থেকে আপামর সাধারণ জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে যোগ দেয়।

সকাল ১০ টার মধ্যেই ঝিনাইদহ শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লা, সড়ক দ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাত্র-জনতার দখলে চলে আসে। বিশেষ করে, বেলা ১১টায় গণমাধ্যমে সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের ঘোষণার পরই জেলার চিত্র পাল্টে যায়। আন্দোলনে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে চলে আসেন। বেলা ১২টার দিকে শহরের পায়রা চত্বর থেকে স্বাধীনতা চত্বর, মডার্ন মোড়, আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়কে ছাত্র-জনতার বিপুল সমাগম ঘটে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশের পর  জেলা শহরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেঁটে পড়েন। বুকে ভাই হারানো, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে, চোখে আর্তনাদের চাহনি নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সেজদায় অবনত হন ছাত্রনেতারা। শহরের পায়রা চত্বরে শোকরানা নামাজ আদায় করেন অনেকেই।

৫ আগস্ট বেলা ২ টার দিকে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদের জেলা পর্যায়ের নেতারা আসেন পায়রা চত্বরে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সর্বদলীয় রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত মিছিল বের হয়। শহর জুড়ে বিতরণ করা হয় শত শত কেজি মিষ্টি। ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ায় শহরের পাড়া মহল্লা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসেন মা-বোনেরা। গ্রামে গ্রামে বিতরণ করা হয় মিষ্টি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট আমাদের কাছে এক জীবন্ত ইতিহাস। 

আমরা ৭১ দেখিনি। কিন্তু আমরা ২৪ অর্জন করেছি, ফ্যাসিবাদের বিলোপ করেছি। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে নতুন স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভিনদেশিদের তাঁবেদার সরকার ছিল আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ আর কখনোই ভিনদেশি কারো তাঁবেদারি সইবে না। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেয়া হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্র ফিরবেই।