শিরোনাম
এ এস এম নাসিম
নোয়াখালী, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আজকের দিনে সরকার পতনের দাবিতে জেলাজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হয় সমাবেশ, চলে আন্দোলন। এ আন্দোলন দমাতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্যাডারবাহিনী ছাত্র-জনতার উপর অনবরত গুলি ও ছররা গুলি বর্ষণ করে। এতে অসংখ্য মানুষ হতাহত হন।
জানা গেছে, সেদিন মাইজদী টাউন হল মোড়ে নোয়াখালী ৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য স্বৈরাচার একরামুল করিম চৌধুরী নিজ হাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ছোড়েন। তার সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি করেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎকালীন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আরমান ও আদনান।
পৌর বাজারের সামনে নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টুর নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। মাইজদী বাজার এলাকায় যুবলীগের সন্ত্রাসী মিঠুন ভট্ট ও ইমন ভট্টের নেতৃত্বে ছাত্রজনতার উপর গুলি ছোড়া হয়। মূলত সেদিন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার উপর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানিতে স্তম্ভিত হয় মানুষ।
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে জানান, সোনাপুর চৌরাস্তা এলাকায় সিএনজি কামাল নামে শ্রমিকলীগের কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী সেদিন দুই ঘণ্টা টানা বিভিন্ন জনের উপর গুলি চালান। নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতা পিচ্চি হাসান ও আল ফারুক স্কুলের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসী আব্দুল গনি রিংকুর নেতৃত্বে ছাত্রজনতার উপর গুলি ধর্ষণ করা হয়।
মাইজদী মুরগির ফার্ম এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পির নেতৃত্বে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর হামলা করা হয়।
নতুনহাট বাজারের পাশে সিএনজি থামিয়ে তল্লাশি চালান ও আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রদের মারধর করেন চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাবলু।
মূলত আতঙ্ক সৃষ্টি করা ও ছাত্রজনতার আন্দোলন ঠেকানোই মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের। কিন্তু বুকে অদম্য সাহস রেখে ছাত্রজনতাও সেদিন রাজপথ দখলেই রেখেছিল। এক পা পিছু হটেনি। বৃষ্টিতে ভিজে ছাত্রদের একাংশ নোয়াখালী জেলা স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে সেদিন নামাজ আদায় করেছিলেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালী জেলার সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, খুব কঠিন দিন ছিল আমাদের জন্য সেদিন। চারদিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে। সেদিন তারা ছিল সশস্ত্র আর আমরা ছিলাম নিরস্ত্র। আমাদের ছিল বুকে বল আর অসীম সাহস। সেই সাহস দিয়েই আমরা তাদের সেদিন মোকাবেলা করেছি। স্বৈরাচার আর সন্ত্রাসীদের ভয় করিনি।
৪ আগস্টের বিভীষিকাময় সেদিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎকালীন নোয়াখালী শহর সভাপতি মুহাম্মাদ সায়েদ সুমন বলেন, আদতে নোয়াখালী ৪ আগস্টই আওয়ামী লীগ মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে আমার চিন্তা হচ্ছিলো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আমাদের ভাই-বোনদের সুবর্ণচর, কবিরহাটে ও সেনবাগে নিরাপদে ঘরে ফেরা কঠিন হবে। যেহেতু আমাদের কাছে তথ্যছিল আওয়ামী লীগ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে হাসিনার ক্যাডারবাহিনীর হামলায় আমাদের পাশের ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে ১৮ জন ভাই শহীদ হয়েছেন।