শিরোনাম
মো. আসাদুজ্জামান
সাতক্ষীরা, ৪ আগস্ট , ২০২৫ (বাসস) : আগস্টের শুরুতেই মাসব্যাপী চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাফল্যের দেখা পায়। ৪ আগস্ট ২০২৪ (রবিবার) সাতক্ষীরার রাজপথে দখল নেয় ছাত্র-জনতা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড় থেকে ছাত্র-জনতার এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউ মার্কেট মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়। এসময় তারা শহরের নিউমার্কেট মোড়ে টানানো শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে আবারো খুলনা রোড মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ সময় তারা, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘এক দফা, এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’- এমনই নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সাতক্ষীরা শহর।
এসময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা শহরের খুলনা রোড মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ম্যুরালে কাঁদা ছুড়ে মারে। পরে পুলিশ এসে তা পরিষ্কার করে দেয়। মিছিল ও সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান, তৎকালীন যুবদল নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলুসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
সবধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে রাতভর চলে বাড়িতে বাড়িতে এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। এতেও দমন করতে পারেনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাহিদ হাসান বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্মরণে সাতক্ষীরায় শহিদি জানাজা ও শহিদি মিছিল হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে বাড়িতে এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলে। আমাকে ধরার জন্য ৪ আগস্ট রাতে ১৭ গাড়ি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আমাকে না পেয়ে ফিরে যায়।’
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছাত্রদল সভাপতি মাসুদুল আলম বলেন, রাতভর পুলিশি অভিযান ও ধরপাকড়ের মধ্যেও ৪ আগস্ট সকালে মিছিল ও সমাবেশ করার জন্য শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মিছিল বের করা যাবে কিনা সবাই সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন আমরাই প্রথম শহরের আমতলা মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে খুলনা রোড অভিমুখে যেতে থাকি।
আমাদের দেখাদেখি শহরের বিভিন্ন মোড় থেকে মিছিল বের হয়ে খুলনা রোড মোড় এলাকায় সবাই সমবেত হই।
সেখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। যা পরে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা শহর।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস.কে.এম আবু রায়হান জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সম্মুখ সারিতে থেকে ছাত্রদল সেদিন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। পুলিশ আমাকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশও দিয়েছিল। তারপরও আমি থেমে থাকিনি। আমিসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এই জুলাই আগস্টের যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই যোদ্ধাদের যেন যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় সেজন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।
জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গণিত শেষ বর্ষের ছাত্র বখতিয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সাতক্ষীরাতে ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। এর আগে রাতভর শহরের বিভিন্ন হোস্টেলে ও বাড়িতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অভিযান চালিয়ে আমাদের নানা ধরনের হুমকি দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিগত দিনের তুলনায় ৪ আগস্ট সকল শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে সাতক্ষীরা-খুলনা রোড মোড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এক দফা দাবিতে সারা বাংলাদেশের মত সাতক্ষীরার রাজপথও তখন মিছিলে মিছিলে ছিল উত্তাল। মিছিল শেষে শহরের খুলনা রোড মোড়ের অবস্থান কর্মসূচি থেকে অসহযোগ আন্দোলনের দাবিগুলো জনতার সামনে উত্থাপন করা হয়। এদিন বিকেল ৩ টার দিকেই দিনের কর্মসূচি শেষ করা হয়।