শিরোনাম
দিনাজপুর, ৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সারাদিন হাসিনা সরকারের ক্যাডারবাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা সড়কে অবস্থান নেয়। তাদের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন পরিবহন শ্রমিক আশরাফুল, লেলিন খন্দকার, ইরফাত, রবিউল ইসলাম রাহুল, রেজুয়ানুল ইসলাম সিজান ও চা দোকানদার রবিন দাসসহ দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা।
আহতদের মধ্যে রবিউল ইসলাম রাহুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
সেদিন ছিল রোববার। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে দিনাজপুর শহরে সড়কে নেমেছিলেন না শ্রেণীপেশার কয়েক হাজার মানুষ। শহরে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন ছাত্র-জনতা। সেখান থেকে দেওয়া হয় নানা প্রতিবাদী স্লোগান।
এ সময় মিছিলকারীরা রাস্তার পাশে অবস্থিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের লটকানো ব্যানার, ফেসটুন ও ভাস্কর্য ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব নিয়ে শহরে সদর হাসপাতালের সামনে থেকে কাচারি রাস্তা হয়ে পুলহাট পর্যন্ত এবং শহরে ভুটি বাবুর মোড় থেকে লিলি মোড়, মর্ডান হয়ে সরকারি কলেজ পর্যন্ত ছিল উত্তপ্ত।
দুপুর ১২ টার দিকে পরিস্থিতি পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সদর হাসপাতালের উভয় পাশে আন্দোলনকারী কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা দখল নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাত্র জনতার বিক্ষোভে হামলা চালায়। এতে অনেক মানুষ আহত হন। ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অসংখ্য টিয়ারসেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতালের সামনে দিনাজপুর সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের ছোড়া ছররা গুলি, টিয়ালসেল ও রাবার বুলেটে শতশত লোক রাস্তায় লুটিয়ে পরেন। দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে আড়াই টা পর্যন্ত শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহতদের পরে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেদিন সংঘর্ষে আহত পরিবহন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম জানান, ৪ আগস্ট দুপুরে শহরের সিএন্ডবি কার্যালয়ের পাশে রেন্ট-এ কারের চালকেরা ভাড়ায় গ্রাহক ধরার জন্য অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনে তিনিসহ অনেকেই দৌড় দিয়ে শহরের কাচারি মোড়ে যান। সেখানে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে তারা একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। আশরাফুল দৌড় দিয়ে সদর জেনারেল হাসপাতালের দিকে যান। হাসপাতালের গেট পর্যন্ত যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলি লেগেছে এবং শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
তিনি জানান, তার শরীরে ২১টি গুলির মধ্যে ৭টি বের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শরীরে ১৪ টি গুলি নিয়ে অনেক কষ্টে তার দিন কাটছে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না। তার সার্বক্ষণিক সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন স্ত্রী শামিমা বেগম ও মা রাশেদা।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো, রফিকুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিবহন শ্রমিক আশরাফুলসহ দুই শতাধিক আহতের তালিকা সরকারিভাবে করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের পরিবারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যেক পরিবারকে গত ৮ মে সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা হয়েছে।