বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭:২৫

ঝালকাঠিতে বিএনপি অফিসে আওয়ামী বাহিনীর অগ্নিসংযোগ

ফাইল ছবি

আককাস শিকদার

ঝালকাঠি, ৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রোববার সকাল দশটা থেকে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শতশত ছাত্রছাত্রীসহ শিক্ষকেরা। সবার হাতে ছিল হাসিনা বিরোধী নানা ব্যানার, কারো হাতে জাতীয় পতাকা। শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে নানা স্লোগানের সাথে চলতে থাকে সমাবেশ। 

ওইদিন সকাল ১১টা থেকে সমাবেশে মিছিলসহ আসতে থাকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামাতে ইসলামী, শিবির, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকের হাতেই ছিল, লাঠি ও জাতীয় পতাকা এবং মাথায় লাল কাপড়। সকাল সাড়ে ১১টায় হাজারের অধিক ছাত্রজনতা মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শুরু করে। এ মিছিলে শতাধিক শিশুরাও অংশ নেয়। মিছিলটি গার্লস স্কুলের মোড় থেকে কামারপট্রি ও ফায়ার সার্ভিস মোড়ের দিকে যেতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর হামলা শুরু করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। 

এ সময় সরকার দলীয় সমর্থক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকিরসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে একাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়। শহরের সাধনার মোড় ও ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অবস্থান নিয়ে মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রোনাল্ডস রোডের এমপি আমির হোসেন আমুর বাসার সামনে স্থাপিত নৌকা খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়।

পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে থাকে তারা।   

ছাত্রজনতার প্রতিরোধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা রাজপথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সকাল ১১টার দিকে জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা একটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করে এবং একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। ছাত্রজনতা রাস্তা থেকে উঠে গেলে বিকাল চারটার দিকে জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা শহরের আমতলা সড়কে জেলা বিএনপির অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়।  

ঝালকাঠি পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাসিমুল হাসান বলেন, আমির হোসেন আমুর নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের প্রতি মারমুখী আচরণ করতো। ২৪ এর জুলাই মাসেও আমরা রাস্তায় নামতে পারিনি। ৪ আগস্ট আমরা শক্তভাবে রাস্তায় অবস্থান নেই। আমাদের অবস্থানে ওরা ভয় পেয়ে যায়। আমরা রাস্তা থেকে উঠে গেলে ওরা বিএনপি অফিসে আগুন দেয়। 

জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাস হরি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন স্কুল কলেজে ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় নামার জন্য রাজি করি। আর তারই ফলশ্রুতিতে ৪ আগস্ট সবাই রাস্তায় আন্দোলনে নামে।

ওই সময়ের সংগঠক বর্তমান এনসিপি নেতা মীর এনামুল হক বলেন, ৪ আগস্ট শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, আমাদের আহ্বানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।