বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৯
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭:০০

সেদিন বগুড়ায় গুলিতে প্রাণ হারান ৫ জন

ফাইল ছবি

কালাম আজাদ

বগুড়া, ৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশের ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে বগুড়া। এ দিন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে দিনভর পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো শহর। এ সময় গুলিতে সদরের চার জন এবং দুপচাঁচিয়ায় একজন নিহত হন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক আহত হন।

নিহতরা হলেন- বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনির (২২), গাবতলীর জিল্লুর রহমান (৪৫), সদর উপজেলার ইসলামপুর এলাকার সেলিম হোসেন (৪৫), বগুড়া সদরের কমর উদ্দীন বাঙ্গী (৪০) ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার আবু রায়হান (২৯)। 

জানা গেছে, সেদিন বগুড়া শহরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি থেকে সকালে বের হয়েছিলেন কমর উদ্দিন খান বাঙ্গী। বিকেলে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায়, তার মরদেহ পড়ে আছে শহরের নবাববাড়ি সড়কে। এরপর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। গোটা শরীরেই বুলেটবিদ্ধ ছিল তার। 

ফাইল ছবি

৪ আগস্ট সংঘর্ষের সময় শহরের সাতমাথায় জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং বিটিসিএল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের বড়গোলা এলাকায় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে কয়েক দফা হামলার পর আগুন দেওয়া হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে গাছের গুঁড়ি, ইট, টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। হ্যান্ডমাইকে প্রতিটি বাড়ি থেকে সবাইকে লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হতে আহ্বান জানান। 

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথা, দত্তবাড়ি, বড়গোলা ও থানা মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। 

সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় এলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ক্ষমতাসীনরা পিছু হটে। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সাতমাথা ত্যাগ করেন।

অন্যদিকে আন্দোলন চলাকালে শহর ও শহরতলি এবং বিভিন্ন উপজেলায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। অফিস আদালত খোলা হয়নি। প্রতিটি সড়কে গাছের গুঁড়ি, ইট ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। লাঠিসোঁটা হাতে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেওয়া নারী ও পুরুষরা ছোট যানবাহনগুলো বের হলে তাড়িয়ে দেন। আন্ত:জেলা ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া নারী ও পুরুষকে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়। 

আন্দোলনকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজিব বলেন, বেশ কয়েক দিন যাবত বাড়িঘরে থাকতে পারিনি, রাজপথই ছিল আমাদের ঠিকানা। সেদিন সকাল থেকে সেখানেই বিক্ষোভ মিছিল করেছি সেখানেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পেয়েছি আমাদের কয়েক ভাই গুলিতে শহীদ হয়েছেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সঠিক খবরও পাচ্ছিলাম না। যতই গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হোক, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে ছিলাম।