শিরোনাম
// আনিচুর রহমান //
ফরিদপুর, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : গত বছরের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট সকালে ফরিদপুর শহরে যখন উত্তাপ ছড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই শহর যেন রূপ নিয়েছিল প্রতিরোধের অঙ্গনে।
সারাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র জনতার উপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা মামলা গুম ও খুনের প্রতিবাদে পরিণত হয়েছিল এক দফা সরকার পতনের দাবিতে। মিছিল আর শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পুরো শহর।
তবে এই দিনটি শুধুই ছাত্রদের বিক্ষোভ নয়, এ দিনটি পরিণত হয়েছিল জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের দিন। সকাল থেকেই শহরে ছিল অস্বাভাবিক উত্তেজনা।
সকাল ১০টা থেকে জড়ো হতে থাকে জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল প্রায় প্রতিটি কলেজের শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স, উকিল, সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যজন, শ্রমিক, নেতা, অভিভাবক, মাদ্রাসার ছাত্র- শিক্ষক, সকল রাজনৈতিক দলের ছিল অংশগ্রহণ। এই অভাবনীয় সংহতি মিছিলটি রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে।
শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল ছুটে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ শান্ত মিছিলের উপর তান্ডব চালিয়ে অশান্ত করে তোলে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা জড়ো হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় হয়ে আলিপুর আওয়ামী লীগ অফিস ভেঙ্গে সুপার মার্কেট হয়ে কোর্ট চত্বরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয় দীর্ঘ সময়। কিছু ছাত্র ছত্র ভঙ্গ হয়ে গেলে শান্তিবাগের মোড়ে ছাত্রলীগের তাণ্ডবে সজীব, সাজিদ সহ অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে।
এরপর মিছিলটি আবার শহরের অনাথের মোড় হয়ে থানার পাশে আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওখান থেকে মিছিলটি জনতার মোড়ে আসলে পুলিশের প্রচুর কাঁদানে গ্যাস, টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে আহত হয় অনেকে।
ঐ দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয় প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র জনতা। সেদিন গর্জে উঠেছিল পুরো শহর। শহরের অলিগলি যেন থমকে দাঁড়িয়ে ছিল আন্দোলনের গর্জনে। শহরের দোকানপাট যানবাহন ছিল বন্ধ।
গুলি করে সারা দেশের ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে শহরের সকল ছাত্র জনতা উচ্চারণ করেন অগ্নিঝরা স্লোগান।
যারা সারা দেশের ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে,তারা দেশের শত্রু। সেদিন পুরো শহর কম্পিত হয়েছিল স্লোগানে স্লোগানে আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। আগস্টের এই দিনটি ছাত্রদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে উঠে এসেছিল একটি আদর্শিক লড়াইয়ের প্ল্যাটফর্মে।