বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫৮

‘কিসের এত রক্তের নেশা, কাল আমার উপর গুলি চালাইয়েন’

পুরো আন্দোলনে পঞ্চগড় জেলায় নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন ফজলে রাব্বী। ছবি : বাসস

।। আবু নাঈম।।

পঞ্চগড়, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে এক দফা। পুরো আন্দোলনে পঞ্চগড় জেলায় নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন ফজলে রাব্বী। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট এই ছাত্র নেতা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘কিসের এত রক্তের নেশা? জাতির সাথে তামাশা করছেন, কাল আমার উপর গুলি চালাইয়েন কত রাউন্ড আছে!’।
এক বছর আগের তার এই স্ট্যাটাসটি এখন নতুন করে সামনে আসছে। মূলত তিনি তৎকালীন ডামি সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে এই পোস্ট করেন।

ফজলে রাব্বী পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে। তিন পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে অনার্স শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

এর আগে, ৩ আগস্ট রাতে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘অবশ্যই আমাদের ভুল আছে! এখন যা বলছি আরো আগে বলা উচিত ছিল! কিন্তু এই ভুলকে দেখিয়ে যা হচ্ছে সেসবেরও একটা সীমা আছে! আওয়ামী লীগ মৃত্যুর মিছিলে ঘুরে দাঁড়ানোর দল, রক্ত স্নানেই শুদ্ধ হতে হবে।’

ফজলে রাব্বী জানান, ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উপস্থিত হয়ে হুমকি দিয়েছিলেন নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা। এরপর ১৯ জুলাইয়ের আন্দোলনে আওয়ামী লীগসহ পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। সেদিন জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। 

একইভাবে ৩ আগস্ট দেয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর আওয়ামী লীগ আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছাত্রজনতা এবার রুখে দিয়ে তাদের পঞ্চগড় ছাড়া করে।

ফজলে রাব্বী বলেন, রাতেই জেনেছিলাম আওয়ামী লীগ তৎকালীন ডামি সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তার নির্দেশে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাতেই পরামর্শ করেছিলাম ছাত্রশিবিরের তৎকালীন জেলা সভাপতি জুলফিকার রহমানের সঙ্গে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যত জনশক্তি লাগবে সব দিবো ইনশাআল্লাহ। জামায়াতে ইসলামীও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে’। এছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদও আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন- তাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে।

তিনি বলেন, ৪ আগস্ট সকালের দিকে খবর পাই আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে চার ভ্যান লাঠি, এক ট্রলি ইট রাখা হয়েছে। সেখানে জড়ো হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। কিন্তু আমরা ছিলাম অনড়। কারণ, আমাদের কর্মসূচি তো পূর্বঘোষিত। যথাসময়ই কর্মসূচি শুরু করি এবং সফল হই।

তিনি আরো বলেন, সেদিন হঠাত করেই সামনে আসে তৎকালীন সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তার ওই স্ট্যাটাস। তিনি রক্ত স্নানে শুদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমি তার ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে লিখেছিলাম, ‘কিসের এত রক্তের নেশা? কাল আমার উপর গুলি চালাইয়েন কত রাউন্ড আছে!’।