বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৩

৪ আগস্ট বিক্ষোভে উত্তাল ছিল নারায়ণগঞ্জ

’২৪ এর ৪ আগস্ট সারাদেশের মতো অসহযোগ আন্দোলন ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ। ছবি : বাসস

নারায়ণগঞ্জ, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশের ৪ আগস্ট আন্দোলনকারীদের জন্য ছিল ৩৫ জুলাই, গুলি আর রক্তে রাঙা আরও একটি দিন। এই দিনে সারাদেশের মতো অসহযোগ আন্দোলন ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ। 

পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় নামা আওয়ামী বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষ শেষে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ যেন সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার মসনদ।

সেদিন ভোর থেকেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পাড়া মহল্লাতেও ছাত্র-জনতা লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নেন। দিনভর মিছিল আর স্লোগানে সরব হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ শহর।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও চিটাগাংরোডসহ কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয়। 

একই চিত্র ছিল বন্দর ও সোনারগাঁসহ রূপগঞ্জ উপজেলায়। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের চাষাড়া বিজয়স্তম্ভ চত্বরে এসে অবস্থান নেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী।

চিত্র পরিবর্তন হয় বেলা ১১টায়। সে সময়  জেলার বিভিন্ন কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন। তারাও যুক্ত হন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। 

রাস্তায় ছাত্র-জনতার ধাওয়ায় পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের আতঙ্কের প্রতীক রাইফেল ক্লাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। 

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ আয়কর অফিস ও জেলা পরিষদ কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। 
পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে।

বেলা ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হামলা করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। ডিসি থিম পার্কে আগুন দেওয়া হলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর বেলা তিনটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতা হয়। 

কিন্ত হঠাৎ সমঝোতা ভেঙে আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে শুরু করে পুলিশ। এতে দুই শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়।

এক বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করে বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার বাসিন্দা অনিক বাসস’কে বলেন, ‘সেদিন দুপুরে পুলিশ সমঝোতা করার পরে, আবারো আচমকা আক্রমণ করে। এতে অনেক মানুষ আহত হন। সেখানে উপস্থিত থাকায়, সেদিন আমিও আহত হই। আমার হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক বলেন,  ‘ইন্টারনেট চালু হলে সারাদেশে ছাত্র-জনতা আবার সংগঠিত হতে থাকে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে সেটা সহজে হচ্ছিল না। এর বড় একটি কারণ হলো, নারায়ণগঞ্জে কোনও ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। এই আন্দোলনে গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না।’

তিনি আরও বলেন, সময়ের প্রয়োজনে রাজপথ আমাদের একত্রিত করেছিল। সেই জন্য আমরা একটি কমিটি করে আন্দোলন শুরু করি। পরে আমাদের কমিটির সমন্বয়ক সাইদুর রহমান আমাদের জেলায় অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৪ আগস্ট সকালেই শহর ছাত্র-জনতার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

এক বছর আগের এই দিনে পুলিশ ও আওয়ামী পেটোয়া বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন বলে জানান তিনি।