শিরোনাম
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন
ফেনী, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): ২০২৪ সালে জুলাইজুড়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন আগস্টে গিয়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দাবিতে সড়কে নামেন ছাত্র-জনতা। গতবছরের ৩ আগস্ট ফেনী শহরে ট্রাংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ আর স্লোগানে সেদিন উত্তাল ছিল ফেনী শহর।
বাদ জোহর শহরের জহিরিয়া মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের জিরোপয়েন্ট ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বরে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করেন ছাত্র-জনতা। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে জেলা শহরের প্রধান সড়ক। সেদিনের জনস্রোত দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা সরে পড়েন।
তাদের অবস্থানের কারণে ট্রাংক রোড থেকে বড় মসজিদমুখী ও শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনে সক্রিয় গণমাধ্যম কর্মী এসএম ইউসুফ আলী বাসসকে জানান, বিক্ষোভ চলাকালে সেদিন আন্দোলনকারীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়,’ ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
পরে জহিরিয়া মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাপ্তি ঘোষণা করলেও একটা অংশ মহিপালে অবস্থান নেন। আধাঘণ্টা অবস্থান করার পর সেখান থেকেও কর্মসূচি শেষ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের বাসসকে বলেন, ২ আগস্ট আমাদের বিক্ষোভ ছিল। পরের দিনের কর্মসূচি নিয়ে শিবিরের দায়িত্বশীল মেহেদি হাসান মেশকাত ও জাহিদ হোসেন ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করি। তাদের দল থেকে সর্বোচ্চ উপস্থিতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
এরপর ছাত্রদলের ফেনী কলেজের যুগ্ম-আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম সাগর, আবু নওশের মজুমদার সানির সঙ্গে যোগাযোগ হয়। জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াদ পাটোয়ারীর সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন ভাইর সঙ্গেও কথা হয়। তারাও সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেওয়া নিশ্চয়তা দেন। এভাবে ৩ আগস্ট আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সর্বোচ্চ রেকর্ড উপস্থিতির মাধ্যমে কর্মসূচির বাস্তবায়ন হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, এ দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। ৩ আগস্ট আমাদের কর্মসূচি কী হবে, কোথায় হবে তা নিয়ে শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি শরিফ ভাই ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক জোবায়ের ভাইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ঠিক করা হয়।
এদিন বাদ যোহর জহিরিয়া মসজিদ থেকে মিছিল শুরু হয়ে ট্রাংক রোড গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি হবে। রীতিমতো সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। কিন্তু মসজিদের সামনে গিয়ে দেখি জহিরিয়া মসজিদ থেকে ট্রাংক রোড পর্যন্ত পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। ভয়ে ভয়ে মসজিদে ঢুকলাম। সেখানে উপস্থিত সবার চেহারায় যেন বিপ্লবের ছবি।
তিনি বলেন, তখন মসজিদের ভিতর থেকেই স্লোগান শুরু করি। পরে মিছিল নিয়ে ট্রাংক রোডের দিকে যাত্রা শুরু হয়। পুলিশকে দেখেই ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। ট্রাংক রোডে গিয়ে ছাত্রজনতা অবস্থান করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, আন্দোলনের সময় আমি নিয়মিত সবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। বিশেষ করে ফেনী ইউনিভার্সিটির তাহমিদ ভাইয়ের সঙ্গে, উনি ফেনী ইউনিভার্সিটির যারা ছিল তাদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করতেন। ওইদিন ছাত্রলীগের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে আমরা মিজান রোড দিয়ে হেঁটে জহিরিয়ায় পৌঁছাই।
তবে ৪ আগস্ট সকাল থেকে সারাদিনের ভয়ংকর পরিস্থিতির তুলনায় ৩ আগস্টসহ আগের দিনগুলো ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত। প্রতিদিনের আন্দোলনে সানি মজুমদার, জাহিদুল আবেদীন সাগর ভাই, নাদের ভাই, আজিজুল্লাহ আহমদি ভাই, মেহেদি হাসান মেশকাতসহ সব মতের লোকজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখেছি।
আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নওশেদ মজুমদার সানি বলেন, ১৭ তারিখের পর থেকে আমরা নিজেরা একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলি। ওই গ্রুপ খোলার উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন কীভাবে আরো জোরদার করা যায়। এছাড়া লোকবল বাড়ানোটাও উদ্দেশ্য ছিল। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা আগস্টের কর্মসূচি সফল করি।
আন্দোলনে থাকা ফেনী পৌরসভার ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেন রাফি বলেন, ২ আগস্ট শুক্রবার ছিল। সেদিন আমরা জহিরিয়া মসজিদে আসি, সবাই একসঙ্গে মিছিল নিয়ে ট্রাংক রোডের দিকে যাই। সেদিন প্রচুর বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেখানে আমরা ৩ টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের সেদিনে কর্মসূচি এবং ৩ আগস্ট ও ৪ আগস্টের কর্মসূচিতে বহু অভিভাবক অংশ নেন।
মো. মহিউদ্দিন খন্দকার নামে একজন স্কুলশিক্ষক বাসসকে জানান, প্রতিদিন ছেলের সঙ্গে তিনি বাসা থেকে বের হতেন। ছেলেকে কর্মসূচিতে দিয়ে তিনি পাশে অপেক্ষা করতেন। এভাবে অনেক বাবা মায়েরা গণঅভ্যুত্থানের সফলতায় ভূমিকা রাখেন।