বাসস
  ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০২

দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জে

নারায়ণগঞ্জে চব্বিশের ৩ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও আওয়ামী বাহিনীর অস্ত্রের মহড়ার মধ্যেই রাজপথে নামেন ছাত্র-জনতা। ছবি: বাসস

\ নুসরাত সুপ্তি \

নারায়ণগঞ্জ, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশের ৩ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও আওয়ামী বাহিনীর অস্ত্রের মহড়ার মধ্যেই মিছিল আর স্লোগানে কেঁপে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জ। গণগ্রেপ্তার, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ, কারফিউ, আওয়ামী বাহিনীর তাণ্ডবে কয়েকদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে পারেননি। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে সেদিন ফের রাজপথে নামেন ছাত্র-জনতা।

সেদিন সকাল ১১টায় হাজারো শিক্ষার্থী চাষাড়া শহীদ মিনারে জমায়েত হন। শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু সড়কে মিছিল করে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়কসহ নবাব সলিমউল্লাহ সড়ক গুলোতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করেন। সারাদিনে একাধিকবার ঝড়ো বৃষ্টি হলেও দূর্বার গতিতে চলে তাদের আন্দোলন। এছাড়া শহরের বাহিরে সিদ্ধিরগঞ্জে গণমিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা সেইদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন করেছিলাম। আমরা অনলাইনে আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা করেই রাজপথে নেমেছিলাম। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমা প্রার্থনা, কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, হত্যাকারীদের বিচারের দাবিসহ ৯ দফার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ না হওয়ায়  ৯ দফা দাবি ১ দফায় রূপান্তরিত হয়।

বিকেলে শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’ শিরোনামে কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেকে করো জয়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এই আয়োজন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন,  চব্বিশের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি, আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি। সেদিন আমরা গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম।

রাতে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ১৩ জনকে সমন্বয়ক ও ৩৬ জনকে সহসমন্বয়ক করা হয়। তাদের নেতৃত্বে পুনরায় আন্দোলন উজ্জীবিত হয়ে উঠে।

কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন - ফারহানা মানিক মুনা, সাইফুল ইসলাম, সারফারাজ হক সজিব, সাজিদ মোমিন , সাইদুর রহমান, ফৌজিয়া তাসনিম, সৌরভ সেন, ফয়সাল আহমেদ রাতুল, মির্জা সাকিব, রাশেদুল সজিব , রাইসা ইসলাম, শারিয়ান আলায়না সাফা, নাফিজা আক্তার।

সহ-সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন, মুন্নি আক্তার প্রত্যাশা, নাসিমা সরদার, সায়েম মিয়া, নিরসাইদুল হক লিহান, নিরব রায়হান, জান্নাতুল ফেরদৌস নিসা, জুনায়েদ ইসলাম, তাইরান আবাবিল রোজা, আবরার মাহির, শাহীন আদনান, মাহতাব হোসেন রিফাদ, আরাফাত বিন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, ফারাবি মাহতাব মাসুম। 

আরও ছিলেন, ওমর ফারুক আফ্রিদি, লুবনা রহমান, মেহেরুন নিসা, মিম জেরিন, সোহান চৌধুরি, আবু সায়েদ, মো. জাহিদুর রহমান শাওন, তানজিলা আক্তার তনু, জাহিদ হাসান, মোহাম্মদ আল রহমান, শাকিল আহমেদ, আব্দুল কাদির, মো. ফাহিম, ইফাদ ইমতিয়াজ অয়ন্ত, চিত্রা ঘোষ পরমা, রায়হান শরিফ, মো. মহিবুল্লাহ।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক বাসস'কে বলেন, জুলাই এর ওই সময়ে আমরা শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দল হয়ে যে যে যার মতো আন্দোলন করতাম। আর ২২ জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনে ভাটা পড়ে। শিক্ষার্থীরা তখন যার যার এলাকায় ও নিকটবর্তী সড়কে ঝটিকা মিছিল ও দেয়াল লিখন করেছিলেন। 

পরবর্তীতে সুষ্ঠভাবে সমন্বয় করে আন্দোলন করার তাগিদে আমরা প্রতি দলের কয়েকজনকে নিয়ে গুগলমিটে একটা মিটিং করি। এরপর দলের সংগঠকদের নিয়ে ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি করেছি। লড়াইয়ের প্রয়োজনে সহসমন্বয়কের পাঁচটি পদ সে সময় খালি রাখা হয়।